ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

চার মোবাইল ফোন অপারেটরের সংবাদ সম্মেলন

এককালীন ১৪ হাজার কোটি টাকা দিতে অপারগতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১১
এককালীন ১৪ হাজার কোটি টাকা দিতে অপারগতা

ঢাকা: লাইসেন্স নবায়নের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রণীত খসড়া নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে দেশর মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে। তাই এ নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আলোচনার দাবি জানিয়েছে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি।



মঙ্গলবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলালিংক, সিটিসেল, গ্রামীণফোন ও রবির এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ আবু দোমা, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওডভার হেশজেদাল, রবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ক্যুনার এবং সিটিসেলের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘খসড়া নীতিমালায় এ চারটি কোম্পানির লাইসেন্স নবায়ন ফি এবং স্পেকট্রাম ইকুইজিশন ফিসহ অন্য যেসব চার্জের কথা বলা হয়েছে, তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে সরকার চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরের কাছ থেকে এককালীন রাজস্ব আয় করবে ১৪ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। আমাদের পক্ষে এ অর্থ যোগান দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। বরং এতে এ মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে। দেশের অর্থনৈতিক খাত এজন্য প্রস্তুত নয়। এর প্রভাব পড়বে জনগণের ওপর। ’

২০১০ সালে এয়ারটেলকে প্রায় বিনামূল্যে স্পেকট্রাম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পর এ চারটি অপারেটরের ওপর ১৪ হাজার কোটি টাকা চাপিয়ে দেওয়া অযৌক্তিক দাবি করে তারা বলেন, ‘এ নীতিমালা বাস্তবায়ন করলে সব অপারেটরের জন্য সমান ক্ষেত্র নিশ্চিত হবে না। ’

অপারেটর প্রধানরা নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এ চার্জের পরিমাণ একটি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ আবু দোমা বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে বিরোধ নয়, আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করতে চাই। কেননা এতে অপর দু’টি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের ব্যবসার ক্ষেত্র সমান থাকবে না। ’

গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টরে জনসন বলেন, ‘২০১০ সালে এয়ারটেলকে পাঁচ মেগাহার্জ নতুন স্পেকট্রাম বরাদ্দ দিয়েছে। বলতে গেলে তারা প্রায় বিনামূল্যে এ সুযোগ নিয়েছে। আর আমাদের ক্ষেত্রে এ স্পেকট্রাম ব্যবহারের জন্য উচ্চমূল্য ধরা হয়েছে। ’

সিটিসেলের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য কাজ করছে। আর এ জন্য সবচেয়ে বেশি যে খাতটি অবদান রাখছে তা হলো টেলিযোগাযোগ। অবকাঠামো, জ্বালানিসহ সব খাতেই সরকার নিজে বিনিয়োগ করছে। একমাত্র টেলিযোগাযোগ খাতই বেসরকারি বিনিয়োগে পরিচালিত হচ্ছে। তাই এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ’

সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠান চারটি সুপারিশমালা তৈরি করেছে। এরই মধ্যে গ্রামীণফোন তাদের সুপারিশমালা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে, বাকিরা বুধবারের মধ্যে জমা দেবে।

সংবাদ সম্মেলনে নীতিমালায় কিছু অপ্রাসঙ্গিক বিষয় অন্তর্ভুক্তির সমালোচনা করা হয়। বলা হয়, মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সম্পর্কে নীতিমালায় যা বলা হয়েছে, তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যর্থ হয়েছে। সোস্যাল অবলিগেশন ফান্ড শুধু এ চারটি প্রতিষ্ঠান বহন করবে, অন্যরা করবে না কেন। কোম্পানির হিসাব-নিকাশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য কোম্পানি আইন রয়েছে। আইপিও’র জন্য শর্ত প্রয়োগ করা হয়েছে, যা দেখার জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন রয়েছে। বিনিয়োগ বোর্ডের আইনে জনবলের এক শতাংশের বেশি বিদেশি না হওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। তাই এসব বিষয় এখানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন ছিল না।

উল্লেখ্য, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স নবায়ন ও স্পেকট্রামের জন্য গ্রামীণফোনকে সাত হাজার ৫৬ কোটি, বাংলালিংককে তিন হাজার ৩০০ কোটি, রবিকে তিন হাজার ১৬৩ কোটি এবং সিটিসেলকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা এককালীন রাজস্ব দিতে হবে।

বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকপ্রতি মাসে আয় ছিল গ্রামীণফোনের ২২৭, বাংলালিংকের ১৬০, রবির ১৯৭ ও সিটিসেলের ১৮০ টাকা। আর গ্রাহক ছিল গ্রামীণফোনের দুই কোটি ৮০ লাখ, বাংলালিংকের এক কোটি ৮০ লাখ, রবির এক কোটি ১০ লাখ এবং সিটিসেলের ১৯ লাখ। এই গ্রাহকসংখ্যা ও গ্রাহকপ্রতি আয় অনুযায়ী লাইসেন্স নবায়নের পর আগামী ১৫ বছরে এ চার কোম্পানির সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোন ৯০ হাজার ৭২০ কোটি, বাংলালিংক ৫৮ হাজার ৩২০ কোটি, রবি ৩৫ হাজার ৬৪০ কোটি এবং সিটিসেলের ছয় হাজার ১৫৬ কোটি টাকা সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে।

এই সম্ভাব্য আয়ের ১৫ শতাংশ অথাৎ ২৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব হিসেবে আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা লাইসেন্স নবায়নের সময়ই আদায়ের কথা বলা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।