ঢাকা: চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রমের লাইনে দাঁড়াচ্ছে মধ্যবিত্তরাও।
এই যেমন মো. ফয়েজ, সীমিত বেতনে চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
তবে মধ্যবিত্তসুলভ মর্যাদা বজায় রাখতে নিজে লাইনে দাঁড়াননি। টাকা দিয়ে ছিন্নমূল এক কিশোরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ফয়েজ দাঁড়ালেন অদূরে।
রাজধানীর ওএমএস’র বিভিন্ন স্পট ঘুরে এমন চিত্র সহজেই মিলছে। লাইনে দাঁড়াবেন কি দাঁড়াবেন নাÑ ফয়েজের মতো এমনতর দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছেন এ রকম লোকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
গ্রিন রোডে ওএমএস’র ট্রাকের অদূরে দাঁড়িয়ে আছেন আফজাল হোসেন। তৃতীয় শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী। তিনিও পারছেন না বাজারের চালের দামের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে। তাই কেজিপ্রতি ২০ টাকা বাঁচাতে তিনিও এসেছেন ওএমএস’র ট্রাকের পাশে। যদি অন্য কাউকে দিয়ে চালটা এখান থেকেই নিতে পারেন!
আফজাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাজারে চালের দাম যে বেড়েছে তা ওএমএস’র লাইন দেখেই বোঝা যায়, বাজারে যেতে হয় না। ’
চাল নিতে আসা অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তারা নিজের জন্য নয়, যাদের বাসায় কাজ করেন তাদের জন্য এসেছেন। তবে কাজের ফাঁকে নিজেদের জন্যও চাল নিতে আসেন এদের কেউ কেউ।
এর আগে ওএমএস’র চাল বিতরণকালে মধ্যবিত্তরা চাল নিতে না এলেও এবার চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অনেক মধ্যবিত্ত ভিড় করছেন চাল বিতরণকারী ট্রাকের সামনে।
এ কথা স্বীকার করেন রেশনিং অঞ্চল ডি-৫ দায়িত্বে নিয়োজিত পরিদর্শক মো.আব্দুর রহিমও।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘মধ্যবিত্তরা চাল নিতে আসছে দেখে আমরা আজ (সোমবার) প্রেসকাবের সামনে একটি ট্রাক দিয়েছি। সচিবালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওখানে বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায় মধ্যবিত্তরাও ওএমএস’র চাল নিতে আসছে। ’
এদিকে ওএমএস’র ট্রাকের সামনে ভিড় বেড়েই চলছে। চাল নিতে আসা গ্রাহকরা স্পটে ট্রাক আসার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হচ্ছে ট্রাকের চাল। ভিড় সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন বিতরণকারীরাও।
এদিন সকাল ১০টায় লাইন নিয়ে সোনারগাঁও রোডে ওএমএস’র ট্রাকের সামনে চাল নিতে আসা নিম্ন আয়ের মানুষদের ধস্তাধস্তিও করতে দেখা গেছে।
নির্ধারিত সময়ের আগেই চাল শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেককে খালি হাতেই ফিরতে দেখা গেছে।
এদিন গ্রিনরোডে গিয়ে দেখা গেল সকাল সাড়ে এগারটায় ট্রাকে মাত্র ৫ বাস্তা চাল অবশিষ্ট রয়েছে। অথচ দীর্ঘ লাইন আরও দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত অনেককেই ফিরতে হবে খালি হাতে।
বাকি চাল কী হল জিজ্ঞেস করলে চাল বিতরণকারী খাদ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাংলানিউজকে জানালেন, তারা ট্রাক নিয়ে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে স্পটে এসেছেন। এর আগ থেকেই অনেকে অপেক্ষা করছেন চালের জন্য।
কারওয়ান বাজার এফডিসি রোডের উপ-পরিদর্শক ওসমান গনি জানান, এর আগেও দু’বার ওএমএস’র চাল দেওয়া হয়েছে। তখন এত ভিড় দেখা যায়নি। এবার সাধারণ ক্রেতাদের পর্যাপ্ত ভিড় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আজ দেড়টায় চাল শেষ হয়ে গেছে। অন্যান্য দিন এর আগেও চাল শেষ হয়ে যায়। ’
এর আগে শনিবার খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক রাজধানীর বেশ কিছু স্থানে ওএমএস’র চাল বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
এ সময় ক্রেতাদের ভিড় দেখে ও চাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে দেখে মন্ত্রী প্রতিদিন চাল বিতরণ কাজে নিয়োজিত ট্রাক সংখ্যা ৯৩টি থেকে বাড়িয়ে ১২৫-এ উন্নীত করা ঘোষণা দেন। সেইসঙ্গে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন তিনি।
তবে সোমবার রাজধানীতে ১০৯টি ট্রাক চাল বিতরণ করছে বলে জানালেন চিফ কন্ট্রোলার অব ঢাকা রেশনিং সুকুমার চন্দ্র রায়।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, লোকবলের অভাবে এখনই মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা যাচ্ছে না। তবে শিগগিরই রাজধানীতে ১২০ থেকে ১২৫ ট্রাক চাল বিতরণে নামবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ট্রাক প্রতি চাল ৩ টন থেকে বাড়ানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে ঢাকা মহানগর ছাড়াও গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারসহ দেশব্যাপী প্রতি কেজি ২৪ টাকা দরে চাল বিক্রি করছে সরকার।
শুক্রবার ও মঙ্গলবার বাদে সপ্তাহের পাঁচ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওএমএস কার্যক্রম চলবে।
জনপ্রতি পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারবে। এছাড়াও সরকার জানুয়ারি মাস থেকে সারা দেশে প্রায় ১১ লাখ ২০ হাজার ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কার্ডধারীরাও ২৪ টাকা দরে একবারে ২০ কেজি চাল কিনতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১১