ঢাকা: ব্যাংক ঋণের যথাযথ ব্যবহারের জন্য কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভোক্তারা ঋণ, এসএমই এবং ব্যবসায়ী ঋণ গ্রহণ করে যাতে শেয়ার বাজার, অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করতে না পারে এ লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে গ্রাহকদের ঋণ গ্রহণের সময় আবেদনপত্রে বিনিয়োগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনারও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা একটি সার্কুলার সকল তফসিলি ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে, গাইডলাইনের ১.২১ এর উপ-অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ঋণ আবেদন পত্রে ঋণের উদ্দেশ্য উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি ঋণ প্রদানের সময় নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে মঞ্জুরীকৃত এবং প্রদত্ত ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা ব্যাংকের দায়িত্ব। কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে কিছু কিছু ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা যে উদ্দেশ্যে গ্রাহক ঋণ গ্রহণ করছেন, সংশ্লিষ্ট খাতে বা সে উদ্দেশ্যে ঋণ ব্যবহার করা হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ঋণ তদারকি ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় গ্রাহকের আবেদনের উল্লেখিত উদ্দেশ্য অনুযায়ী যথাযথ খাতে বিশেষ করে উৎপাদনশীল খাতের বিতরণ করা ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হওয়ায় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ফলে গ্রাহকের ঋণ গ্রহণের আবেদনে উল্লেখিত ঋণের উদ্দেশ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ হচ্ছে কিনা এসব বিষয় মনিটরিং করার লক্ষ্যে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণ বিতরণের সময় প্রকল্প যাচাই-বাছাই এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখেই ঋণ বিতরণ করতে বলা হয়েছে।
ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে শুরু করে বিশেষায়িত, বেসরকারি এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর গ্রাহকরা বিভিন্ন খাতে নামে-বেনামে ঋণ গ্রহণ করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ করা হচ্ছে তা পূরণ করা হচ্ছে না।
ফলে একদিকে যেমন দেশের শিল্প বিকাশে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে শেয়ার বাজারে কম মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত হচ্ছে। এতে বাজারে ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া ভোক্তা ও ব্যবসায়ী ঋণ গ্রহণ করে অনেক গ্রাহক গাড়িও কিনছেন।
এসব বিষয়গুলো বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্নভাবে খতিয়ে দেখেই ব্যাংক ঋণ বিতরণের ওপর কঠোরতা আরোপ করেছে।
এদিকে শেয়ার বাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ ঠেকানো যাচ্ছে না। ব্যাংকের মোট দায় বা মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিদের্শ থাকলেও ১০টি ব্যাংক সর্বোচ্চ প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে।
যদিও শেয়ার বাজার থেকে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সময় বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সে সময়সীমাও হয়তো কার্যকর করা হবে না বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ করার ফলে একদিকে যেমন শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতনের আশংঙ্কা রয়েছে অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়েও শংঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে গ্রাহকদের ডিপোজিটদের অর্থ যাতে কোনোভাবেই নষ্ট না হয় এবং ব্যাংকগুলো যাতে ঝুঁকিমুক্ত থাকে এ লক্ষ্যে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১০