ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পদোন্নতি নিয়ে কর্মসংস্থান ব্যাংকে অনিয়মের অভিযোগ

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১০
পদোন্নতি নিয়ে কর্মসংস্থান ব্যাংকে অনিয়মের অভিযোগ

ঢাকা: পদোন্নতি নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কর্মসংস্থান ব্যাংকে। গুরু অপরাধে সাময়িক বরখাস্ত একজন কর্মকর্তা যেমন পদোন্নতি পেয়েছেন তেমনি ওই অপরাধের অভিযোগ যারা এনেছেন তারা বঞ্চিত হয়েছেন পদোন্নতি থেকে।



আর এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থান ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারি পর্যায়ে।

ব্যাংক সূত্র জানায়, ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা সংগ্রহ ও উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগে গত বছরের ১১ আগস্ট উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আমিন উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি তাকে। এ অবস্থাতেই তিনি পদোন্নতি পেয়ে গেছেন।

অপরদিকে, আমিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ দায়ের করায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তিন কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার মজুমদার, মিহির মজুমদার ও  মো. জাহাঙ্গীর হোসাইনকে পদোন্নতির তালিকায় না রেখে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কেবল ওই তিন জন বাদে মৌখিক পরীক্ষার বিভিন্ন পদে অংশগ্রহণকারী ৮০ জনের মধ্যে ৭৭ জনকে পদোন্নতির জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

সূত্র মতে, গত ১২ অক্টোবর বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের ৮৫ কর্মকর্তাকে ডিজিএম থেকে জিএম পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য একটি তালিকা করা হয়। ওই তালিকায়  দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মসংস্থান ব্যাংকের ডিজিএম মো. আমিন উদ্দিনের নাম রয়েছে ৪৫ নম্বরে। ৩০ অক্টোবর সকাল ১০টায় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পদোন্নতি সংক্রান্ত কমিটির ইন্টারভিউ বোর্ডে হাজির হন।

বিষয়টি জানাজানির পর কর্মসংস্থান ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন শাখায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরখাস্তকৃত ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা আমিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রধান কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তারা সুর্নিদিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (ব্যাংক) শামস আল মুজাহিদের পক্ষপাতিত্বের কারণে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আমিন উদ্দিনের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার ও তাকে পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২১ জুন এক অফিস আদেশে আমিন উদ্দিনকে চকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।

ওই আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত আমিন উদ্দিনকে কর্মসংস্থান ব্যাংক (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা-২০০২ এর ৪১/১ (ক)/আ পরিধি অনুযায়ী প্রাপ্য ৩ মে ২০১০ থেকে আগামী ৩ মে ২০১১ পর্যন্ত বার্ষিক বেতনবৃদ্ধি পরবর্তী দু’বছরের জন্য স্থগিত করা হলো। তার সাময়িকভাবে বরখাস্তকালীন চাকরিকাল নিয়মিত চাকরি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এসময় নিয়মিত বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

সূত্র মতে, ১৯৯৮ সাল থেকে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ কেলেঙ্কারি ও বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তাদের কাছে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় কর্মকর্তারা ২০০৯ সালে ডিজিএম আমিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। সে সময় গঠিত ৩টি তদন্ত কমিটি ব্যাংকের ১৬ ব্যক্তির স্বাক্ষ্যও গ্রহণ করেন। আর এ তদন্ত কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন অভিযুক্ত আমিন উদ্দিনের সহযোগী বলে অভিযুক্ত মহাব্যবস্থাপক মো. শাহজাহান মিঞা।

তিনিই কৌশলে অভিযুক্ত আমিন উদ্দিনকে বাঁচিয়ে এখন পদোন্নতি দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আমিন উদ্দিনের পদোন্নতির খবর পেয়ে প্রদীপ কুমার মজুমদার, মিহির মজুমদার ও মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন গত ১৭ মার্চ আবারও অর্থমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন। তারা সুর্নিদিষ্ট অভিযোগের তথ্য প্রমাণও দাখিল করেন। অর্থমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার  নির্দেশ দেন।

তবে, গত ১১ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামস আল মুজাহিদ মন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে অভিযোগ দায়েরকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) আদেশ দেন। শুধু তা-ই নয়, মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা ওইদিন কর্মসংস্থান ব্যাংকের বিভিন্ন পদে ৮০ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ে মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে নিজে এসে এ আদেশ জারি করেন।

তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদনকারী জ্যেষ্ঠ ওই তিন কর্মকর্তার মৌখিক পরীক্ষা না নেওয়ার জন্যও চাপ সৃষ্টি করেন। পরে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হলেও ৮০ জনের মধ্যে ৭৭ জনকে পদোন্নতির জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়।

অর্থমন্ত্রী কাছে দায়েরকৃত অভিযোগের মধ্যে আমিন উদ্দিনের কুষ্টিয়া শহরের ২/১ পূর্ব চন্দ্র লাহিড়ী লেন, কোটপাড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকায় আর্কষণীয় চার তলা ভবন নির্মাণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ওই ভবন নির্মাণে তিনি কর্মসংস্থান ও কৃষি ব্যাংক থেকে মাত্র ৩২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। বাকি টাকা কোথায় পেলেন?

এছাড়া তিনি কৃষি ব্যাংকে থাকাকালেও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হলে দুর্নীতির আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে অভিযোগকারীরা জানান।

এ ব্যাপারে কর্মসংস্থান ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম মনিরুজ্জামান খন্দকার টেলিফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ ব্যাংকের বোর্ড এবং তদন্ত কমিটি দেখেছে। তারাই ভাল বলতে পারবেন। এছাড়া আমার কাছে কোনও অভিযোগ বা আদেশ এলে আমি সে সম্পর্কে জানতে পারি। এর বাইরে কিছু না। ’

উপসচিব শামস আল মুজাহিদ বলেন, ‘কর্মসংস্থান ব্যাংকের ডিজিএম আমিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে এবার তালিকায় নাম খাকলেও তার পদোন্নতি হচ্ছে না। ’

তিনি বলেন, ‘আমিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করেছেন ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান। এ ব্যাপারে আমি কোনো হস্তক্ষেপ করিনি, এটা আমার কাজ না। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা।

ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. শাহজাহান মিঞাও তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

অবসরে যাওয়া এ কর্মকর্তার দাবি, ডিজিএম আমিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তবে কেন দু’বছর বেতন-ভাতা ছাড়া আমিন উদ্দিনের অন্য সুযোগ-সুবিধা স্থগিত রাখা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তার ওপর অবিচার করা হয়েছে। ’

অভিযোগ দায়েরকারী তিন কর্মকর্তার পদোন্নতি স্থগিত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।

এতো অভিযোগ সত্ত্বেও পদোন্নতির তালিকায় স্থান পাওয়া ডিজিএম আমিন উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad