চট্টগ্রামে চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের ডা. সমীরুল ইসলামকে চট্টগ্রামে প্রথম রক্তের প্লাজমা দেওয়া হয়। এতে তিনি করোনা থেকে সুস্থ হলেও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে তাকে বাঁচানো যায়নি।
প্রথম দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে প্রচলিত পদ্ধতিতে প্লাজমা সংগ্রহ করা হতো। পরবর্তীতে গত ৮ জুন থেকে প্লাজমা এফারেসিস মেশিন সংযুক্ত করা হয় বিভাগটিতে।
জানা যায়, করোনার প্রথম চিকিৎসা শুরু হওয়া চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে কোনো রোগীকে এখন পর্যন্ত প্লাজমা দেওয়া হয়নি। এছাড়া চমেক হাসপাতালে এ বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে জেনারেল হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৫ জনকে প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ২ জন মারা গেলেও সুস্থ হয়েছে ৩জন।
চমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ৩৫ ডোনার তাদের রক্তের প্লাজমা প্রদান করেছেন।
এছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা করোনা রোগীদের জন্য ৪৫ ইউনিট রক্তের প্লাজমা সরবরাহ করেছে বিভাগটি। প্রতি এক ইউনিটে ২০০ মিলি প্লাজমা রয়েছে যা ৪৫ জন করোনা রোগীকে প্রদান করা হয়েছে।
কিন্তু এই বিভাগে রক্তের প্লাজমা দেওয়ার পরিসংখ্যান থাকলেও নেই প্লাজমা নিয়ে সুস্থ হওয়া রোগীর পরিসংখ্যান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ তথ্য থাকলে প্লাজমা ব্যবহারে সফলতার সঠিক সংখ্যা জানা যেত।
প্লাজমা নিয়ে কাজ করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া মনে করেন, প্লাজমা দেওয়া রোগীদের সুস্থ হওয়ার সঠিক তথ্য থাকলে প্লাজমার সফলতা সহজে নির্ণয় করা সম্ভব হতো।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্লাজমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ এন্টিবডি আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া দরকার। তা না হলে রোগীকে প্লাজমা দিয়ে কোন সুফল মিলবে না। তাই রোগীকে প্লাজমা দেওয়ার আগে প্লাজমার এন্টিবডি টেস্ট করতে হবে।
‘এতে করে প্লাজমায় কি পরিমাণ এন্টিবডি রয়েছে তা জানা যাবে। এন্টিবডি টেস্ট কিট দিয়ে সহজে এ টেস্ট করা সম্ভব। এছাড়াও আরও একটি পদ্ধতিতে এন্টিবডি টেস্ট করা যায়। তবে ওই পদ্ধতিটি খুবই জটিল। ’
তিনি আরও বলেন, রোগীকে প্লাজমা দেওয়ার সঠিক সময়টি বেছে নেওয়া খুবই গুরত্বপূর্ণ। কারণ সময়মতো প্লাজমা প্রয়োগ করা না হলে রোগী সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। যেহেতু করোনার কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাই এমন সময় এটি প্রয়োগ করতে হবে যাতে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রধান ডা. তানজিলা তাবিদ বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ৪৫ ইউনিট প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়েছে। যা ৪৫ জন রোগীকে প্রদান করা হয়েছে।
‘আমাদের হাসপাতালে স্ক্রীনিং ক্রসম্যাচিংয়ের খরচ বাবাদ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ১ ইউনিটের জন্য ১ হাজার ৫০ টাকা। এই স্ক্রীনিং ক্রসম্যাচিং করতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কিট কিনতে হয়। তাই খরচ বেশি। ’
প্লাজমার এন্টিবডি পরীক্ষার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে এন্টিবডি টেস্ট করার সুযোগ নেই। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এ্যা এন্টিবডি কিট আমদানি করতে অনুমতি দিয়েছে শুনেছি।
‘আমরাও চেষ্টা করছি এন্টিবডি টেস্ট শুরু করার। আমাদের দেশে এই কিট পাওয়া গেলে আমরাও শুরু করতে পারবো। ’
প্লাজমার বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান আছে কিনা জানাতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বাংলানিউজকে বলেন, চমেক হাসপাতাল ছাড়াও আরও দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্লাজমা সংগ্রহ করে। এছাড়া সিএমপির উদ্যোগে একটি প্লাজমা ব্যাংকও করা হয়েছে।
‘তবে যেহেতু এটি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি তাই এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এমন কোনো নির্দেশনাও নেই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২০
এমএম/এমআর/টিসি