ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চির প্রেরণার অমর একুশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
চির প্রেরণার অমর একুশ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে আসেন সর্বস্তরের মানুষ।

চট্টগ্রাম: অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা, সেই থেকে শুরু, সেই থেকে শুরু দিন বদলের পালা…। গীতিকবির ভাষায় জাতির দিনবদলের পালা শুরু হয়েছিল যেদিন, বাঙালির মননে অনন্য মহিমায় ভাস্বর চিরস্মরণীয় সেদিন একুশে ফেব্রুয়ারি।

ইতিহাসের পাতায় রক্ত পলাশ হয়ে ফোটা সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহর রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আজ শুক্রবার। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে আসেন সর্বস্তরের মানুষ। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দিবসটি পালিত হচ্ছে।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে ঘটেছিল বাঙালির ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার ঘটনা। ‘বাংলা ভাষা প্রাণের ভাষা’ স্লোগানে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয় বাঙালি তরুণ প্রজন্ম।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে আসেন সর্বস্তরের মানুষ। ইতিহাসবিদদের মতে, ভাষার প্রশ্নে একুশের আন্দোলন হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তা ছিল শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ। সেদিন আত্ম-অধিকার, সমতাভিত্তিক সমাজ আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্নে জেগে উঠেছিল তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ।

একুশের আন্দোলনেই ঘটে বাঙালির আত্মবিকাশ, যার ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে এসেছে মহান স্বাধীনতা।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে আসেন সর্বস্তরের মানুষ। একুশে তাই বাঙালির চেতনার প্রতীক। একুশের শহীদদের ঠাঁই এখন প্রতিটি বাঙালির মর্মমূলে। পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় উচ্চারিত হয় একেকটি নাম। মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে সারা দেশে, অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং বিদেশে যেখানে রয়েছে বাঙালি, সেখানেই গড়ে উঠেছে অহংকারের প্রতীক শহীদ মিনার।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে আসেন সর্বস্তরের মানুষ। একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মত্যাগের অহংকারে ভাস্বর মহান একটি দিন, জেগে ওঠার প্রেরণা। দেশমাতৃকার প্রয়োজনে আত্মোৎসর্গ করার শপথ গ্রহণের দিন। সেই ভালোবাসায় মধ্যরাত থেকে মানুষের স্রোত শুরু হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে। সব বয়সী শ্রেণি-পেশার মানুষ শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক ও ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ভাষাশহীদদের স্মরণ করেন।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে আসেন সর্বস্তরের মানুষ। নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রভাত ফেরি করে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রথম প্রহরে আলপনায় রাঙিয়ে তোলেন শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ও নগরের বিভিন্ন সড়ক।

শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হয় শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে প্রভাতফেরি। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের স্রোত। এক পর্যায়ে শহীদ মিনারের আশপাশের এলাকা, সিনেমা প্যালেস, রাইফেল ক্লাব, নন্দনকানন, ডিসি হিল, নিউমার্কেট চত্বরসহ পুরো এলাকা লোকারণ্য হয়ে ওঠে।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে আসেন সর্বস্তরের মানুষ। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী ও সাধারণ মানুষ। পরে একে একে ফুল দিয়ে জাতির মহান সন্তানদের স্মরণ করেন তারা। ‘সবার হাতে ছিল বাংলা বর্ণমালা’, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ সহ নানান স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড।

পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় শহীদ মিনারে আসা মানুষের স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। অনেকে একুশের গান গেয়ে শহীদদের স্মরণ করেন। বাবার কাঁধে চড়ে শিশুরাও এসেছে শহীদ মিনারে। নগর পুলিশের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার ঘিরে তিনস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে আসেন সর্বস্তরের মানুষ। আজ ২১ ফেব্রুয়ারি ছুটির দিন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। এ উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহ পৃথক কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
এসএস/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।