পাহাড়তলীর কৈবল্যধাম এলাকার মালিপাড়া পাকিস্তানি সৈন্য ও বিহারীদের দেওয়া আগুনে পুড়েছে। প্রাণ বাঁচাতে যারা কৈবল্যধাম আশ্রমে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখানেও তাদের রেহাই মিলেনি।
যুদ্ধাহত সুনিল চন্দ্র দাশের বয়স তখন ২০ বছর। মালিপাড়া থেকে পালিয়ে আশ্রমে এসেছিলেন তিনি। কৈবল্যধামে প্রবেশ করার মুহূর্তেই তার পায়ে পাকিস্তানি সৈন্যের লাথি, মাথায় অস্ত্র দিয়ে আঘাত। তারপর তিনি হয়ে যান অজ্ঞান। সেই যাত্রায় প্রাণে বাঁচলেও আঘাতের কারণে এখনও হাঁটতে কষ্ট হয়, কমে গেছে শ্রবণশক্তি।
মুক্তিযুদ্ধের আরেক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা- কৈবল্যধাম রেলসেতু ধ্বংস। ২৯ অক্টোবর ডিনামাইট দিয়ে পাকবাহিনীর শতাধিক সৈন্যসহ ট্রেন উড়িয়ে দেন গেরিলাযোদ্ধারা। মারা যায় অন্তত ৬০ জন। চারদিন বন্ধ থাকে ঢাকার সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ।
বর্বরতার সাক্ষী চট্টগ্রাম ক্লাব
১৯৭১ সালে মার্চের শেষদিকে চট্টগ্রাম ক্লাবে পাকিস্তানি সেনারা চালিয়েছিল বর্বরতা। নারীদের ধরে নিয়ে ক্লাবে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হতো। এরপর গুলি চালিয়ে হত্যা করে লালখানবাজার বধ্যভূমি ও কর্ণফুলী নদীতে মরদেহ ফেলে দেওয়া হতো। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা চট্টগ্রাম ক্লাবের ১ নম্বর কটেজ সহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়। সেনাদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া ক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলের উত্তর দিকে কাচে ঘেরা দেয়ালটি সংরক্ষণ করে রেখেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
টর্চার সেল ‘ডালিম হোটেল’
মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে যে ক’টি ‘টর্চার সেল’ ছিল ‘ডালিম হোটেল’ তার মধ্যে একটি। আন্দরকিল্লা নজির আহমদ চৌধুরী রোডে অবস্থিত এ ডালিম হোটেলে একাত্তরের ঘাতক মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর ধরে আনা মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালিদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো। মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালিকে হত্যার পর তারা উল্লাস করতো। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে এ নির্যাতন।
মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, রাজনীতিক সাইফুদ্দিন খান, জাহাঙ্গীর চৌধুরী, ড. ইরশাদ কামাল খানসহ অনেকেই এখনও ডালিম হোটেলে মীর কাসেমের নির্যাতনের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন।
নন্দনকানন টিঅ্যান্ডটি অফিসের পেছনের টেলিগ্রাফ রোডের জমিদার রঞ্জন নাথের মালিকানাধীন ‘মহামায়া ভবন’ দখলে নিয়ে মীর কাসেমের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী এটিকে ‘ডালিম হোটেল’ নামকরণ করে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে৷
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯
এসি/টিসি