ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

তারুণ্য জেগেছিল সবার মনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৯
তারুণ্য জেগেছিল সবার মনে শাটল ট্রেনের রেপ্লিকায় ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন চবির সাবেক শিক্ষার্থীরা। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে কেউ এখন মন্ত্রী আবার কেউ সচিব। কেউবা অবসরে গেছেন বছর দশেক আগে। কারও বয়স ৭০ কিংবা তারও বেশি। তবুও ছুটে এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে কিছু সময় কাটাবেন বলে। আবার যেন তারুণ্য জেগেছে সবার মনে। কেউ লাল শাড়িতে কেউ বর্ণিল পাঞ্জাবিতে সেজেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের চিত্রটা ছিল এমন।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম পুনর্মিলনীর উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২ পর্যন্ত চলে আলোচনা ও স্মৃতিচারণ।

বিকেল ৩টায় নৃগোষ্ঠীর সম্মিলিত নৃত্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। এরপর পর্যায়ক্রমে সাবেক শিক্ষার্থীদের নানান পরিবেশনা। সাবেক শিক্ষার্থী শাহ সেলিমের গলায় ‘এই মুখরিত জীবনের’ গানটি সবার মদ্যে তারুণ্য ফিরিয়ে এনেছে। সাবেক শিক্ষার্থীরা সমস্বরে গেয়েছেন মান্নার ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’।

চবির সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা।  ছবি: সোহেল সরওয়ার২৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তৈরি থিম সং পুরো অনুষ্ঠান মাতিয়ে তোলে। এভাবে একে একে সাবেক শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেন গান ও আবৃত্তি। রেনেসাঁ ব্যান্ডের সদস্য নকিব খানের সঙ্গীত পরিবেশনা দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হয়।

এমএ হালিম চাকরি থেকে অবসরে নিয়েছেন ২০১০ সালে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম ব্যাচের ছাত্র। বেশ কিছু পরিচিত বন্ধুবান্ধব পেয়ে আপ্লুত তিনি। বলছেন, অনেকদিন যাওয়া হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেকদিন দেখা হয়নি বন্ধুদের সঙ্গে। এক মিলনমেলাতেই সব অপূর্ণতা যেন পূর্ণতা পেয়েছে।

১৮তম ব্যাচের হুমায়ূন কবির চৌধুরী চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি বলেন, অনেক বন্ধুকে পেয়েছি। যাদের এ সময় এসে পাওয়াটা এক কথায় অসম্ভব। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বলেন, এটা স্বপ্নের মতো। কিন্তু অনেক বেশি উপভোগ করছি সময়টা। তারুণ্য ফিরে পেয়েছি আজ আবার।

২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোবাররা সিদ্দিকা বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক। অনেকদিন পর বান্ধবীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লাল শাড়ি পরেছেন।

কথামালা, স্মৃতিচারণার পাশাপাশি ছিল ঝলমলে নাচ আর স্মৃতিজাগানিয়া গান।  ছবি: সোহেল সরওয়ারসৈয়দ কুতুবউদ্দিন আলম বর্তমানে সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। ২৬তম ব্যাচের এ শিক্ষার্থী বলেন, সবকিছু আনন্দের ছিলো। তবে আয়োজনটা ক্যাম্পাসে হলো আমরা আরও বেশি আনন্দ করতে পারতাম। তা ছাড়া অনেকের ক্যাম্পাসে যাওয়া হতো।

১১ কেজির কেক!

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দর্শন বিভাগের ছাত্রী ছিলেন সাকিয়া সুলতানা। কেক তৈরির দারুণ এক আর্টিস্ট তিনি। নিয়েছেন দেশবিদেশের বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ। পুনর্মিলনী উপলক্ষে একটি স্পেশাল কেক তৈরি করেন তিনি। ১১ কেজি ওজনের কেকটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।

কয়েকটি বইয়ের সঙ্গে একটি হ্যাটের চিত্রে অসাধারণ কারুকার্যে তৈরি করা হয়েছে কেকটি। সাকিয়া বলেন, পুনর্মিলনী উপলক্ষে সবাই যখন অবদান রাখছে, তখন আমি ভিন্ন কিছু করার চিন্তা থেকেই এই কেক তৈরি করি। তিনি মালয়েশিয়া থেকে উইলটন কোর্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের আর্টিস্ট ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন।

উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম, তারপর শিক্ষক ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করছি। জ্ঞান ও গবেষণার মাধ্যমে যেন বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেজন্য অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সবার সহযোগিতা ও দোয়া চাই। প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতির মাধ্যমে আমরা যেন পৃথিবীর মানচিত্রে নাম লেখাতে পারি।

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলমের সঞ্চালনায় ও সভাপতি আবদুল করিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সাবেক তথ্যসচিব মোসলেম চৌধুরী, সাবেক মুখ্যসচিব আব্দুল করিম, সাবেক সচিব আব্দুস শহীদ, বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, আওয়ামী লীগের দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ, চাকসুর ভিপি নাজিম উদ্দীন, মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী প্রমুখ।

বক্তব্য দেন মাহবুবুল আলমঅ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম পুনর্মিলনীর আহ্বায়ক আলাউদ্দিন নাসিম বলেন, আমরা প্রথম পুনর্মিলনী উদ্যোগের শুরুতে আশা করেছিলাম, হয়তো দুই-তিন হাজার শিক্ষার্থী এতে অংশ নেবেন। কিন্তু আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আট হাজারের বেশি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কাজ করা, মানবতার কল্যাণে কাজ করা।  

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটায় নগরীর চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও বাউল উৎসবের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।

>> প্রকৃতি নিজের কোলে লালন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৯
জেইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad