শুক্রবার (১১ অক্টোবর) নিজের ফেসবুক পেইজে এ স্ট্যাটাস দেন তিনি।
যাতে তিনি লেখেন, অধ্যাপক পুলিন দে ছিলেন অগ্নিযুগের বিপ্লবী, মাস্টারদা সূর্য সেনের সহযোগী।
অধ্যাপক পুলিন দে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের সাহসী সহযোদ্ধা ছিলেন উল্লেখ করে নওফেল লেখেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামে তখন সাম্প্রদায়িক মানসিকতার রাজনীতি তুঙ্গে, কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার সিদ্ধান্তে অধ্যাপক পুলিন দে ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদ প্রেসিডিয়াম, অর্থাৎ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে। আজীবন দলের এবং দেশের জন্য কাজ করেছেন।
‘‘আমার শৈশবের সকল স্মৃতিতে তিনি জড়িয়ে আছেন। অবিবাহিত ছিলেন, কোনো পরিবার পরিজন রেখে জাননি, আমরাই ছিলাম তার পরিবার। প্রতি ঈদে, কোরবানিতে, আমাদের বাসায় সকাল থেকে অবস্থান করতেন, তার জন্য আলাদা করে রান্না হতো। আমার বাবা প্রচণ্ড রাগী ছিলেন, নানান মিছিল সমাবেশে ক্ষিপ্ত হয়ে যখন রাগারাগি করতেন, শিশু আমি আশ্রয় খুঁজতাম কখনো পুলিন জেঠুর পাশে গিয়ে কখনও এমএ মান্নান চাচার পাশে গিয়ে- যখন অন্য শিশুরা খেলার মাঠের আনন্দে ছিলো। আমি সৌভাগ্যবান এই মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। তাদের কথা শুনতাম, না বুঝলেও বোঝার চেষ্টা করতাম। ছড়ার বই ছিলো না আমার, পত্রিকা বানান করে আমাকে পড়াতেন পুলিন জেঠু। মন খারাপ করে থাকতাম আমি প্রায়ই, তাই আমাকে নিয়ে তিনি একটি ছড়া বানিয়েছিলেন, ‘নওফেল, খায় আপেল, চালায় সাইকেল, খেলে রাইফেল। ’ খেলার রাইফেল হাতে দিয়ে স্লোগান শেখাতেন, ‘আমরা সবাই মুজিব সেনা ভয় করি না বুলেট বোমা। ’ পত্রিকার অনেক শব্দ বুঝতাম না, তিনি বুঝিয়ে দিতেন। ’’ শৈশবের স্মৃতিচারণ করেন নওফেল।
‘আজ স্মরণ করি শ্রদ্ধাভরে, একেকজন অধ্যাপক পুলিন দে সম ব্যক্তিদের, হারিয়ে যাওয়া সেইসব আত্মত্যাগী বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক কর্মীদের, যারা নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দলের জন্য কাজ করেছেন, যাতে এই দল, বাংলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জন করতে পারে। আজকের প্রজন্মের কাছে তাদের কথা তুলে ধরতে হবে। আমাদের আদর্শিক সংগ্রামের পথ অনেক কঠিন ছিলো, বাকস্বাধীনতা চর্চা দূরের কথা, হত্যা, নির্যাতন, গুম, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস মোকাবেলা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজকে এখানে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের রক্ত, জাতীয় চার নেতার রক্ত, আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মী আর তাদের পরিবারের আত্মত্যাগ আর বিসর্জনের রক্তক্ষরণের ফলে যেই অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে, সেটিই হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ইতিহাসের আত্মত্যাগী ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক পুলিন দে বেঁচে থাকবেন আমাদের স্মৃতিতে, শ্রদ্ধার সাথে। ’
পুলিন দে’র জন্ম ১৯১৪ সালের ১ অক্টোবর পটিয়ার ধলঘাটে। বাবা সারদা কুমার দে, মায়ের নাম সাবিত্রী দেবী। তিন বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ। বাবা ছিলেন ডাক কর্মচারী। পুলিন দে পড়াশোনা করেছিলেন ধলঘাট হাইস্কুলে। ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন প্রথম বিভাগে। তারপর সব পরীক্ষাই দিয়েছিলেন জেল থেকে।
কৈশোরে পুলিন দে যোগ দিয়েছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মিতে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৩৫ সালে হিজলী বন্দি নিবাস থেকে আইএ, রংপুর জেল থেকে ১৯৩৭ সালে বিএ এবং প্রেসিডেন্সী জেল থেকে পরীক্ষা দিয়ে ১৯৪৪ সালে তিনি এমএ পাস করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৯
এআর/এসি/টিসি