ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

লক্কড় মার্কা গণপরিবহনে বন্দি ৬০ লাখ মানুষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
লক্কড় মার্কা গণপরিবহনে বন্দি ৬০ লাখ মানুষ গণপরিবহন সংকটে যাত্রীদের দুর্ভোগ। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: পরিবহন সেক্টরে চলছে চরম নৈরাজ্য। গাড়ির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছেন যাত্রীরা।

ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের পাশাপাশি বন্দরনগর চট্টগ্রামের জনসংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় বাড়ছে না গণপরিবহন।

বর্তমানে এ নগরের জনসংখ্যা ৬০ লাখের বেশি হলেও তার বিপরীতে গণপরিবহন খুবই নগন্য। লক্কড়-ঝক্কড় এসব গণপরিবহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজপথে।

এসব গণপরিবহন ও অধিক সংখ্যক ব্যক্তিগত যানবাহন নগরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে নাজুক করে তুলছে।

গণপরিবহন সংকটে যাত্রীদের দুর্ভোগ।  ছবি: বাংলানিউজবৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের প্রায় প্রতিটি মোড়েই যাত্রীদের জটলা। বাস-টেম্পো আসতেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দু-একজন  উঠতে পারলেও বাকিরা ব্যর্থ হচ্ছেন। তারা হতাশ হয়ে ফের পরবর্তী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন।

প্রতিটি গণপরিবহন যাত্রীতে ঠাসা। দরজায় ধরে ঝুলছেন অনেকে। তিল ধারণের ঠাঁই নেই বাস-টেম্পোতে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও গণপরিবহনে উঠতে না পেরে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।

গণপরিবহন সংকটে যাত্রীদের দুর্ভোগ।  ছবি: বাংলানিউজবিশেষ করে অফিস শুরু আর ছুটির সময় কর্মজীবী মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গণপরিবহন সংকটের কারণে। ঘর থেকে বের হয়ে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছা আবার কাজ শেষে সময়মতো বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

দুই নম্বর গেইট মোড়ে বাসের অপেক্ষায় থাকা ব্যাংক কর্মকর্তা মোতাহের হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, যথারীতি আগ্রাবাদে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়েছি। কিন্তু রাস্তায় এসে দেখি পরিবহন সংকট। যে পরিমাণ যাত্রীর ঠেলাঠেলি, এতে বাস কিংবা টেম্পুতে ওঠার সুযোগ নেই। এদিকে, অফিসের সময়ও পার হয়ে যাচ্ছে। খুব সমস্যায় পড়ে গেলাম।

গণপরিবহন সংকটে যাত্রীদের দুর্ভোগ।  ছবি: বাংলানিউজঅফিস শুরু ও অফিস ছুটির সময় শত শত যাত্রী নগরের বিভিন্ন মোড়ে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষায় থাকে প্রতিদিন। নগরের মুরাদপুর, চকবাজার, কালুরঘাট, আন্দরকিল্লা, নিউ মার্কেট, কাজির দেউরি, অক্সিজেন, শাহ আমানত সেতু এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাত্রীদের প্রায়ই দুর্ভোগে পড়তে হয়।

বিকল্প যানবাহনে বিশেষ করে উবার, পাঠাও অ্যাপস ভিত্তিক রাইডগুলোর মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে স্বল্প ও সীমিত আয়ের কর্মজীবী মানুষদের পরিবহন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।

গণপরিবহন সংকটে যাত্রীদের দুর্ভোগ।  ছবি: বাংলানিউজএদিকে রুট পারমিটের শর্ত ভঙ্গ করে মাঝপথে যাত্রী নামিয়ে হয়রানি, বাড়তি ভাড়াসহ অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের অভিযোগে নিয়মিত জরিমানা করেছে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবুও থেমে নেই যাত্রী হয়রানি।

কাউন্টার সার্ভিস ও সিট ক্যাপাসিটি সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রতিদিনই সিটের বাইরে দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন করা হচ্ছে।

গণপরিবহন সংকটে যাত্রীদের দুর্ভোগ।  ছবি: বাংলানিউজসম্প্রতি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, গণপরিবহনের ব্যাপক চাহিদা সত্ত্বেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও প্রাইভেট কার নগরের মাত্র ১১ শতাংশ যাত্রীর পরিবহন চাহিদা মিটিয়ে ৫৬ শতাংশ সড়ক দখলে রেখেছে, যা চট্টগ্রাম শহরের আধুনিক ও নির্বিঘ্ন ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ট্রাফিক (উত্তর) বিভাগের টিআই-প্রশাসন মহিউদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, শিল্প-কারখানা ও ইপিজেডের জন্য ২০০টি বাসের সিলিং নির্ধারিত থাকার ফলে সকাল ও বিকালের বিভিন্ন সময়ে শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের জন্য অন্যান্য রুটের বাসগুলো চলে যায়। এতে সাধারণ যাত্রীরা বিভিন্ন সময়ে চরম যানবাহন সংকটে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গণপরিবহন সংকটে যাত্রীদের দুর্ভোগ।  ছবি: বাংলানিউজতবে মহানগরে সিটি বাসের ১০নম্বর রুট এবং ৬নম্বর রুটে নির্ধারিত স্টপেজ ভিত্তিক টিকেট পদ্ধতির সিটি বাস সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। এতে যানবাহন সংকট কিছুটা লাঘব হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মোস্তাক আহমদ খানের নির্দেশে এই দুই রুটের সিটি বাসের রুট পারমিট ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানান মহিউদ্দিন খান।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
এসএস/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।