ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

এসআই আমির হামজার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেল কমিটি

সরওয়ার কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৯
এসআই আমির হামজার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেল কমিটি এসআই আমির হামজা

চট্টগ্রাম: সীতাকুণ্ড মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমির হামজার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তিকে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া, মামলায় জব্দ হওয়া গাড়ি আত্মসাৎ, আসামির কাছ থেকে টাকা আদায় ও হয়রানির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটি এসআই আমির হামজার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশও করেছে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) শম্পা রাণী সাহা এসআই আমির হামজার বিরুদ্ধে তদন্ত করে জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এ প্রতিবেদন (স্মারক নম্বর-১৭৮) জমা দেন।

পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা ২৭ ফেব্রুয়ারি সেই অনুসন্ধান প্রতিবেদনসহ একটি চিঠি চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বরাবরে প্রেরণ করেন।

সেই চিঠির প্রেক্ষিতে ১০ মার্চ এসআই আমির হামজার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিকে অবস্থা জানানোর জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন ও ফিন্যান্স) এসএম রোকন উদ্দিন।

২০১৮ সালে ডিসেম্বরে ঘটনার পর এসআই আমির হামজার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে অভিযোগ দিলে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এসআই আমির হামজাকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। বর্তমানে এসআই আমির হামজা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত আছেন।

যা রয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) শম্পা রাণী সাহা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে- ‘আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরেও সীতাকুণ্ড মডেল থানার মালামাল ও সম্পত্তি রেজিস্ট্রার ও মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এসআই আমির হামজা বিধি মোতাবেক জিম্মাকারীর নিকট গাড়িটি জিম্মা প্রদান না করে আদালতের আদেশ অমান্য করে, অসৎ উদ্দেশ্যে ভয়ভীতি দেখায়। ’

‘গাড়িটি আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে জিম্মাকারীকে (মোতাহের হোসেন) ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মানামায় সই নেয়। তাকে মাদক ব্যবসায়ী বলে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানার দ্বিতীয় তলায় অফিস কক্ষে হ্যান্ড ক্যাপ পড়িয়ে আটক করে রাখে। ’

‘রাতে মোতাহের হোসেনকে থানা থেকে বের করে তার (এসআই আমির হামজা) নিকট কম দামে বিক্রি করার প্রস্তাব দেয় এবং বিক্রি না করলে প্রাইভেট কারটি ফেরত দিবে না বলে জানিয়ে দেয় আমির হামজা। পরে আমির হামজার পরিচিত মাসুদ নামে এক চালকের সহায়তায় সেই প্রাইভেট কারটি থানা থেকে বের করে নিয়ে যায় আমির হামজা। ’

শম্পা রাণী সাহা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন- ‘পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সঠিক দায়িত্ব পালন না করে অসৎ উদ্দেশ্যে পুলিশ হেফাজতে থাকা প্রাইভেট কার অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার ফলে পুলিশ বিভাগের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় মামলা রুজু করার সুপারিশ ও মতামত প্রদান করা হলো। ’

তদন্ত যে কারণে

২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ডের বড় দারোগাহাট এলাকা থেকে ফেনসিডিলসহ একটি প্রাইভেট কার ও একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করে র‌্যাব সদস্যরা। পরে ফেনসিডিলসহ প্রাইভেট কার ও কাভার্ডভ্যান সীতাকুণ্ড মডেল থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব সদস্যরা।

ওই মামলার আসামি মোতাহের হোসেন আদালত থেকে জামিনে এসে হাইকোর্ট থেকে প্রাইভেট কার জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করেন। আদালত ১০ লাখ টাকার বন্ডে সেই প্রাইভেট কার মোতাহের হোসেনের জিম্মায় দেন।

মোতাহের হোসেন অভিযোগে উল্লেখ করেন- ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মোতাহের হোসেন সীতাকুণ্ড মডেল থানা থেকে প্রাইভেট কারটি জিম্মায় নিতে আসলে প্রথমে কমমূল্যে বিক্রির প্রস্তাব দেয় দেয় এসআই আমির হামজা। মোতাহের হোসেন গাড়িটি বিক্রি করবেন না বলে জানালে তাকে থানায় হ্যান্ড ক্যাপ পড়িয়ে আটকে রাখেন। এ সময় মোতাহের হোসেনের মোবাইল, মানিব্যাগ ও ঘড়ি কেড়ে নেয়।

পরে মোতাহের হোসেনকে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন এসআই আমির হামজা। সর্বশেষ ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি।

এসআই আমির হামজা তার মোবাইল ফোনে আটক অবস্থায় মোতাহের হোসেনের ছবি তুলে। পুনরায় গাড়িটি বিক্রির প্রস্তাব দেয়।

পরে গাড়ি মেরামত বাবদ মোতাহের হোসেনের কাছ থেকে ২৭ হাজার টাকা নিয়ে ফেলেন এসআই আমির হামজা।

শম্পা রাণী সাহা তার তদন্তে উল্লেখ করেন- আমির হামজা ভুয়া জিম্মানামায় সই নেন এবং সাক্ষীদের সই জাল করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) শম্পা রাণী সাহা।

পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ব্যস্ততার অযুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত থাকা এসআই আমির হামজা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী মোতাহের হোসেন গাড়ি থানা থেকে নিয়ে গেছেন। নিয়ে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পর তিনি আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। ’

অভিযোগ মিথ্যা হলে তাহলে কীভাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) শম্পা রাণী সাহা তার তদন্তে এসআই আমির হামজার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন তা জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি অভিযুক্ত এসআই আমির হামজা।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৯
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।