ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘ছোট মন আর বড় জাতি একসঙ্গে হয় না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৯
‘ছোট মন আর বড় জাতি একসঙ্গে হয় না’ পাঠকের প্রশ্নের উত্তর দেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: ছোট মন আর বড় জাতি একসঙ্গে হয় না মন্তব্য করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, আমাদের বড় জাতি হতে হলে মনকে বড় করতে হবে। মনকে বড় করার অন্যতম হাতিয়ার বই। বইকে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে ঢুকিয়ে দিতে হবে।   

বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে অমর একুশে বইমেলা মঞ্চে ‘পাঠক আড্ডা’য় তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, কাল ট্রেনে এসেছি।

চারপাশে সাধারণ মানুষ। তাদের নৈকট্যকে বড় মনে করি।
এটাকে জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ মনে করি। সে কারণে আমি ফেসবুকে নেই। কারণ ফেসবুকে মানুষ নেই। মানুষের ছায়া আছে। হ্যান্ডশেক করার সুযোগ নেই। ১২ হাজার মাইলের দূরত্ব। মানুষ থেকে যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সে একা হয়ে গেছে। বালু ও কাদার পার্থক্য আছে। কাদার মধ্যে বালু একসঙ্গে রাখার শক্তি আছে। মানুষকে একসঙ্গে রাখে প্রেম, ভালোবাসা।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জন্মেছি একা। তার মানে আমার জীবন একা নয়। যে মানুষের সঙ্গে থাকে মৃত্যুর সময় তার চারপাশে মানুষ থাকে। প্রত্যেকের এমন কিছু করা উচিত, যাতে মানুষ মৃত্যুর পর মানুষ কম-বেশি স্মরণ করে।

বইপড়ায় উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বই কি কতগুলো ছবি, অক্ষরের সারি? সব বই কি পৃথিবীতে বাঁচে? কিছু কিছু বাঁচে। যে বই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষেরা লিখে সেগুলোই বই। শ্রেষ্ঠ মানুষের হৃদয়ও শ্রেষ্ঠ। তাদের সৌন্দর্য, মূল্যবোধসহ সব কিছু শ্রেষ্ঠ। বই থেকে উচ্চতর মনুষ্যত্ব চলে আসে পাঠকের মধ্যে। বই পড়া মানে নিজের চেয়ে বড় হওয়া। কেউ যদি ৫০০ বই পড়ে সে বিশাল নদী হয়ে যাবে। হাজার বই পড়লে সে সমুদ্র হয়ে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা কলেজ সে সময় দেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান কলেজ ছিল। ৭৫ শতাংশ নম্বর না পেলে ভর্তি করা হতো না। ঢাকা কলেজের একটি সেকশনে যত ভালো ছাত্র আছে, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না। ছাত্র-শিক্ষকের মধুর সম্পর্ক ছিল। প্রাণে প্রাণে জীবন যোগ হয়ে যেত। কথা বলার সময় মনে হতো, সক্রেটিসের শিষ্যদের সঙ্গে বেঁচে আছি। অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি আমাকে সায়েন্স কলেজ থেকে ধরে নিয়ে যান। যারা বুঝবে, মনে রাখবে, ভালোবাসবে তাদের ছেড়ে যেতে চাইনি। প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের সান্নিধ্যের লোভে কলেজ ছাড়িনি।

পাঠকের প্রশ্নের উত্তর দেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।  ছবি: সোহেল সরওয়ারএকদিন আমি ক্লাসে বললাম, শিক্ষকের বেতন পে-স্কেল অনুযায়ী দেওয়া হয়। শিক্ষক ও ইঞ্জিনিয়ারের বেতন সমান। তোমরা শিক্ষক হতে চাও কারা? শিক্ষক হওয়ার জন্য একটা ছেলে হাত তুললো। ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলো সবাই। তখন একজন ছাত্র বললো, স্যার বেতন সমান কিন্তু আয় সমান নয়! 

তিনি বলেন, খবরদার পড়ুয়া মেয়ের প্রেমে পড়ো না। সে ভালোবেসেছে বইকে, সে তোমাকে দেবে কী! যে গাছের দিকে তাকায়, নদীর রহস্য, সমুদ্রের ঢেউয়ের বিস্ময় নিয়ে কৌতূহলী চোখে তাকায় তাকে ভালোবাসো। বুদ্ধিমতী, সুন্দরী, লম্বা-মেয়েদের পাত্র চাই বিজ্ঞাপন বেশি দেখা যেত।

কনে দেখার স্মৃতি সম্পর্কে বলেন, আমি বিয়ের আগে স্ত্রীকে দেখিনি। না দেখে বিয়ে করেছি। আমি দেখলাম, দেখে বিয়ে করলে যা হবে, না দেখে বিয়ে করলেও তা-ই হবে! দেখে বিয়ে করলেও ডিভোর্স হয়। একসময় প্রথম দর্শনে প্রেম কথাটা খুব চালু ছিল। প্রেম যেমন সুখ দেয়, তেমনি বুকের রক্তও শোষণ করে।

বই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জীবনটা কি শুধু দর্শন? শুধু বিজ্ঞান? সেগুলোর দরকার আছে। উপলব্ধির দরকার আছে। হালকা, চটুল, আনন্দময় জিনিসেরও দরকার আছে। আমাদের হিমালয়ের তুষারবৃত্ত সৌন্দর্য, মরুভূমি, ঘাসের ওপর শিশির বিন্দুও দেখা দরকার।

এক মায়ের প্রশ্নের উত্তরে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, কোনো বাচ্চাই কি বই পড়ায় আগ্রহী হচ্ছে না? বই পড়া অত সহজ নয়। পৃথিবীতে সবাই বই পড়তে পারে না। সবাই গান শুনতে পারে, নাচ দেখতে পারে, ফুটবল-ক্রিকেট খেলা দেখতে পারে। ১০ জনে একজন বই পড়ে। বই পড়তে চিন্তাশক্তি, মননশীলতা, বুদ্ধিমত্তা লাগে।

লেখক হওয়ার স্বপ্ন ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সময় করতে পারিনি। এখনো পারিনি। সময়ের অভাবে হয়নি। আমার মধ্যে যে ভাবনা-চিন্তা আছে তা দিয়ে ২০০ বই লিখতে পারবো। লিখেছি মাত্র ৩৭টি। ষাটের দশকে তরুণ লেখকদের আন্দোলন, সত্তরের দশকে টেলিভিশন, এরপর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এত লোকের সঙ্গে পরিচয় এখন আর কাউকে চিনতে পারি না। আমার মাথায় তিন লাখ মানুষের মুখ আছে। সাফল্য হচ্ছে স্থূল ও বৈষয়িক বিষয়। সফলতা একটা দক্ষতা। এটি অনেক মানুষের থাকতে পারে। সার্থকতা কিন্তু দক্ষতা নয়। সার্থকতা ভালোবাসায়, মমতায়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আদনান মান্নান।  

বাংলাদেশ সময়:  ১৯২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।