সৈকত বলতে কক্সবাজার, কুয়াকাটা কিংবা পতেঙ্গায় বালুচরের যে দৃশ্য চোখে ভাসে গুলিয়াখালী সে হিসেবে ব্যতিক্রম। এখানে প্রকৃতি এমন সব উপকরণ দিয়েছে যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
আরও পড়ুন>>
** গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড়
** সম্ভাবনার গুলিয়াখালী সৈকত ঠেকে যাচ্ছে রাস্তায়
** চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বিশালতার হাতছানি
রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) শেষ বিকেলে গুলিয়াখালী সৈকতে দেখা হয় ঢাকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ১০-১২ সদস্যের একটি দলের সঙ্গে। এর মধ্যে দুই-তিন জন ছাত্র। বাকিরা ছাত্রী। কৌশিক পড়েন তৃতীয় বর্ষে। বললেন, গুলিয়াখালীর কথা অনেক দিন ধরে শুনে আসছি। তাই সবান্ধবে চলে এলাম। এককথায় অপূর্ব। না দেখলে বলে বোঝানো কঠিন। তবে সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালী ঘাট পর্যন্ত আসার সড়কটির খুব বাজে অবস্থা।
দলের নারী সদস্যদের একজন মনিকা। তিনি বললেন, টুরিস্ট স্পট হিসেবে গুলিয়াখালী ব্যতিক্রম। উপভোগের জন্য সময় নিয়ে আসতে হবে। কিছুটা অ্যাডভেঞ্চার আছে। রোমাঞ্চ আছে। নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর অবারিত সুযোগ আছে। মুগ্ধ হওয়ার মতো ছোট-বড় অনেক ক্যানভাস। নিরাপত্তার কারণে সন্ধ্যার আগেই ফিরতে হচ্ছে। অথচ সূর্যাস্তের দৃশ্যটা কী সুন্দর দেখুন।
ঘাট থেকে গুলিয়াখালীর মূল জায়গায় স্টিল বডির নৌকায় পর্যটকদের পারাপার করেন মাঝি জসিম উদ্দিন। বললেন, শুক্র-শনিবারে তো হাজারো মানুষের মিলনমেলা। বেশিরভাগই তরুণ। তরুণীসহ অন্য প্রায় সব ধরনের মানুষই আসেন তবে সংখ্যায় কম।
তিনি জানালেন, সন্ধ্যার পর কিছু হরিণ আসে গুলিয়াখালী সৈকতে। জেলেরা নিয়মিত দেখেন হরিণগুলো। দিনের বেলা দেখা যায় না। হয়তো আল্লাহ প্রদত্ত গর্তগুলোতে লুকিয়ে থাকে।
কুমিল্লা থেকে মাইক্রোবাসে সপরিবারে এসেছেন ঝুলন শর্মা। তিনি বলেন, সীতাকুণ্ড-মিরসরাই বেল্টে এত বেশি পর্যটন স্পট রয়েছে যেগুলো সত্যিই অপূর্ব। সীতাকুণ্ডের আদি তীর্থস্থান চন্দ্রনাথ ধাম, বিরুপাক্ষ মন্দির, শম্ভুনাথ, রামকৃষ্ণ মিশন, ব্যাসকুণ্ড, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক, সহস্রধারা ও সুপ্তধারা জলপ্রপাত ইত্যাদি মুগ্ধ করে। কিন্তু গুলিয়াখালীর সৌন্দর্যটা আমার কাছে অন্যরকম মনে হয়েছে। এ জায়গাটির পরিচর্যা দরকার। পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার।
সরকারিভাবে পর্যটন স্পট ঘোষণা না হলেও স্থানীয়ভাবে একটি কমিটি রয়েছে সৈকতের দেখভাল ও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য। কিছু দোকানপাটও গড়ে উঠেছে। সীতাকুণ্ডের লাল পেয়ারা, সুস্বাদু ডাব, আমড়াসহ মৌসুমি ফলমূল, চা-নাশতা, পানীয় এমনকি ভাতও মেলে। তবে যারা দলগতভাবে গুলিয়াখালী আসেন তারা খাবারটা সীতাকুণ্ড বাজারের ভালো ভালো রেস্টুরেন্টে সেরে নেন।
৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের মদিন উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমি মনে করি গুলিয়াখালী সৈকত হবে পর্যটকদের নতুন গন্তব্য। কিন্তু এর জন্য দরকার সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ঘাট পর্যন্ত সড়কটি অন্তত চার লেনের করা। এখন ছোট্ট সড়কটি দিয়ে দুইটি মাইক্রোবাস আসা-যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকার যদি এটিকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করে, একটি পুলিশ ক্যাম্প করে তবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল তো বটে বিদেশিরাও আসতে শুরু করবে। কারণ গুলিয়াখালীতে প্রকৃতির খেয়ালখুশিতে ভাঙাগড়ার যে খেলা আছে, থোকা থোকা যে সৌন্দর্যের হাতছানি আছে তা অন্য কোনো সৈকতে নেই।
লিটন সাহেদ খান প্রবাসে থাকেন। বললেন, ফেসবুকে এক বন্ধু গুলিয়াখালীর সেলফি দিয়েছিল। তা দেখে এতটা মুগ্ধ হয়েছি দেশে এসে প্রথম এখানেই বেড়াতে আসি। এরপর প্রতি সপ্তাহে আসি।
মো. আলমগীর ও সোহেল রানা রিপন হাতে তাজা ডাব নিয়ে ফেরি করে বেড়ান সৈকতের এদিক-ওদিক। তারা জানালেন, তাজা ডাবের জোড়া ১০০ টাকা বিক্রি হয়। মানুষ খেয়ে তৃপ্তি পায়। প্রশংসা করে। তখন আর কষ্ট মনে হয় না।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
এআর/টিসি