ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দুর্গম এলাকাতেও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম!

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
দুর্গম এলাকাতেও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম! মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: বাংলানিউজ

সীতাকুণ্ড থেকে: সীতাকুণ্ড উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের এলাকা শেখেরহাট। জেলে পাড়া অধ্যুষিত সৈয়দপুর ইউনিয়নের এ দুর্গম এলাকায়ও পৌঁছে গেছে ডিজিটাল বাংলাদেশের হাওয়া। তুলনামূলক ‘অনুন্নত’ শেখেরহাটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শেখেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে চলছে মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে পাঠদান।

শুধু শেখেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, সীতাকুণ্ডের ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। যার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় দুর্গম এলাকায়।

দুর্গম এলাকার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারের ডিজিটালাইজেশনের কারণে একদিকে যেমন ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে, তেমনি বাড়ছে বিদ্যালয়ে শির্ক্ষাথী ভর্তির সংখ্যাও। যার সুফল ভোগ করছেন সীতাকুণ্ডের মানুষ।

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৯৮টি। এর মধ্যে সৈয়দপুরে ১৫টি, বারৈয়াঢালায় ১১টি, মুরাদপুরে ১৩টি, বাড়বকুণ্ডে ৭টি, বাঁশবাড়িয়ায় ৮টি, কুমিরায় ৮টি, সোনাইছড়িতে ৭টি, ভাটিয়ারিতে ৭টি, সলিমপুরে ৮টি এবং পৌরসভায় ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

এসব প্রাথমিক স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণিতে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৩০ হাজার ৫৯৮ জন ছাত্র এবং ২৯ হাজার ৯৬২ জন ছাত্রীসহ পড়াশোনা করছে ৬০ হাজার ৫৬০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ৮ হাজার ৭১২ জন, প্রথম শ্রেণিতে ১০ হাজার ৬৩৭ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১০ হাজার ৮১৩ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১০ হাজার ২২৬ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১০ হাজার ৪৪৯ জন এবং ৫ম শ্রেণিতে ৯ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থী।

পাঁচ বছর আগে এসব প্রাথমিক স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণিতে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ২৮ হাজার ৭২৬ জন ছাত্র এবং ২৭ হাজার ৫৮৫ জন ছাত্রীসহ শির্ক্ষাথীর সংখ্যা ছিলো ৫৬ হাজার ৩১১ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে শিক্ষার্থী বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নয়, বিদ্যালয় ভবন আধুনিকায়ন, বিদ্যালয়ে ফুলের বাগান করে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি, শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা সহায়ক উপকরণ, বিনামূল্যে পাঠ্য বই, উপবৃত্তি, খেলাধুলার ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগের কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ নুরুচ্ছোফা বাংলানিউজকে জানান, সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী বিদ্যালয়গুলোতে ‘শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিক্ষা’ চালু রাখতে আমরা কাজ করেছি। এতে শাস্তির ভয়ে নয়, আনন্দদায়ক পরিবেশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ক্লাশরুমে শিখছে। ফলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহও তাদের বাড়ছে।

তিনি বলেন, সীতাকুণ্ড অনেকটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা হওয়ায় এখানে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন কাজ করে। কাজের কারণে অনেকে বছরের মাঝামাঝি সময়ে সীতাকুণ্ড ছাড়ে। সঙ্গে তাদের ছেলে মেয়েরাও চলে যায়। এ জন্য ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা শূন্যের কোটায় এখনও নামিয়ে আনতে পারিনি আমরা। তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসরিন সুলতানা বাংলানিউজকে জানান, সীতাকুণ্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে সবসময় মনিটরিং করি আমরা। কিছু সংকট থাকলেও চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজেলা থেকে সীতাকুণ্ডের শিক্ষার মান ভালো বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে সীতাকুণ্ডে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার ১৪ শতাংশ হলেও সরকারি নানা উদ্যোগের কারণে তা এখন ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। সাক্ষরতার হারও বেড়েছে সীতাকুণ্ডে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।