ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চামড়া আড়তদারদের মাথায় হাত!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
চামড়া আড়তদারদের মাথায় হাত! চট্টগ্রামের আড়তে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে চামড়া। ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: সাধারণত তিন হাত ঘুরে একটি চামড়া ব্যবহার উপযোগী করা হয়। প্রথমে মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করেন। তারপর সেটি কাঁচা চামড়া আড়তদারদের কাছে বেচে দেন।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনে চামড়া সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু করেন কাঁচা চামড়া আড়তদাররা। এরপর সেটি ঢাকায় ট্যানারি মালিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

তারাই প্রক্রিয়া শেষে চামড়া ব্যবহার উপযোগী করেন।

এবছর চামড়ার সরকার নির্ধারিত দাম গতবারের চেয়ে কম হওয়ায় কোরবানির আগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ট্যানারি মালিক- তিন পক্ষই চিন্তিত ছিলেন তাদের ব্যবসা নিয়ে।

শঙ্কায় ছিলেন জটিল চামড়া ব্যবসার নানা হিসাব-নিকাশের পর শেষ পর্যন্ত লাভের মুখ দেখা নিয়েও।   

তবে ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে এসে চামড়া ব্যবসার জটিল হিসাব নিকাশের কিছুটা জানা গেছে। মাঠ পর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রহ করা মৌসুমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কারসাজি করে চামড়ার দাম বেশি রাখায় শেষ পর্যন্ত লাভের দেখা পাচ্ছেন না চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদাররা।

জানা গেছে, এবার ঢাকার বাইরে সরকার প্রতি বর্গ ফুট চামড়ার দাম ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। সাধারণত একটি গরুর চামড়া ১৫ থেকে ২০ বর্গ ফুট হয়। সে হিসাবে চামড়ার দাম পড়ে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। অর্থাৎ এ দামেই চামড়া কিনবেন ঢাকার ট্যানারি মালিকরা।

চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদাররা জানান, লাভের মুখ দেখতে চাইলে ট্যানারি মালিকরা যে দামে চামড়া কিনবেন সাধারণত এর চেয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কম দামে কিনতে হয়। কিন্তু রাজনৈতিক ও স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী মৌসুমি ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কারসাজির কারণে এটি সম্ভব হয়নি।

অনেকটা বাধ্য হয়েই ট্যানারি মালিকদের কাছে যে দামে তারা চামড়া বিক্রি করবেন সে দামে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তাদের চামড়া কিনতে হয়েছে।

কাঁচা চামড়া আড়তদার আলী রেজা বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে এবার প্রায় ৬ লাখ পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। সে হিসাবে চামড়া সংগ্রহ হওয়ার কথা। কিন্তু কোরবানির দিন বুধবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় সে পরিমাণ চামড়া আমাদের কাছে আসেনি। ফলে বেশি দামেই আমাদের চামড়া কিনতে হয়েছে।

তিনি বলেন, যে চামড়া আমরা কিনেছি তা প্রক্রিয়া করতে প্রায় ১ থেকে ৩ মাস সময় লাগে। সংরক্ষণ খরচ, কর্মচারীর বেতনসহ সব মিলিয়ে লাভের মুখ দেখতে চাইলে যে চামড়া ৫০০ থেকে ৯০০ টাকায় কেনা হচ্ছে তা ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে ১ টাকাও দেবেন না, বরং কম দেবেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত বছর যে চামড়া বিক্রি করেছি এখনো তার দাম পুরোটা পায়নি। এবছর তাদের কাছে চামড়া বিক্রি না করলে সে টাকা আটকে রাখবে। তাই ক্ষতি হলেও তাদের কাছেই চামড়া বিক্রি করতে হবে।

আড়তদার জহির মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বংশ পরম্পরায় এ ব্যবসা শিখেছি। ছেড়ে দিলে কী করবো। যারা পারছেন তারা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এক সময় প্রায় ৩০০ মতো আড়তদার থাকলেও তা এখন ১২০ এ নেমে এসেছে। ট্যানারিগুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জহির মিয়া বলেন, সরকারের একটি সিদ্ধান্তই পারে আমাদের বাঁচাতে। ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে যদি চামড়ার দাম একটু বেশি নিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে আবার ঘুরে দাঁড়াবে চামড়া ব্যবসা।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার ট্যানারি মালিকদের নানা সুবিধা দিচ্ছে। তাদের জন্য লোনের ব্যবস্থাও করেছে। এরপরেও তারা আমাদের বাকী টাকা পুরো বছর রেখে দেয়। আমাদের হক মেরে এতো টাকা কী করবে তারা?

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির লিমিটেড এর সভাপতি আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হলেও দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি আমরা। বাড়তি দামে চামড়া কিনে এখন ট্যানারি মালিকদের যদি তা বাড়তি দামে বিক্রি করতে না পারি তাহলে চামড়া ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত রাখা ছাড়া উপায় নেই।

এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
এমআর/টিসি   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।