ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পাওনা টাকা না দিতে ছিনতাইয়ের নাটক!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৮
পাওনা টাকা না দিতে ছিনতাইয়ের নাটক!

চট্টগ্রাম: বাকলিয়া এলাকায় দেড় লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেছিলেন নাছির উদ্দিন (৪৫)। এ ঘটনায় রোববার (১৯ আগস্ট) মামলাও দায়ের করেছিলেন বাকলিয়া থানায়। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা।

কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল না, পাওনাদারের টাকা পরিশোধ না করতে নাছির উদ্দিন সাজিয়েছিলেন এমন নাটক।  পুলিশের কাছে এ ঘটনা স্বীকারও করেছেন নাছির উদ্দিন।

নাছির উদ্দিন পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা এলাকার জোবায়ের আহমদের ছেলে। তিনি কাতার প্রবাসী।

পটিয়া শান্তিরহাট বাজারের জোবায়ের প্লাজার মালিক তিনি।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বাংলানিউজের কাছে এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

প্রণব চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, নাছির উদ্দিন পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি দেড় লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন। তার কাছ থেকে কোনো টাকা ছিনতাই হয়নি। এ ঘটনা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন।

রোববার বাকলিয়া থানায় দায়ের করা মামলায় নাছির উদ্দিন উল্লেখ করেছিলেন, দুপুরে চাক্তাই জনতা ব্যাংকের শাখায় তার মামাত ভাই মো. আনোয়ারুল ইসলামের অ্যাকাউন্ট থেকে দেড় লাখ টাকা তুলে পায়ে হেঁটে আসছিলেন। চাক্তাইয়ে ব্যাংক এশিয়ার সামনে আসার পর অজ্ঞাতনামা দু’জন লোক তার কাছে টাকা পাবে বলে অপেক্ষমাণ একটি সিএনজি অটোরিকশায় জোর করে তুলে নেয় এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল সেটটি কেড়ে নেয়। অটোরিকশাটি শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বরের পূর্বপাশে থামে। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে তুলে তাকে বাস্তুহারা সৎসঙ্গের পেছনের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে আরেকজন দাঁড়ানো ছিল। পরে তারা নাছির উদ্দিনকে ধারালো চাকুর ভয় দেখিয়ে দেড় লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মোবাইল সেটটি ফেরত দেয়।

এ ঘটনার পরপরই তদন্তে নামেন বাকলিয়া থানা পুলিশ ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। অল্প সময়ের তদন্তে বেরিয়ে আসলে আসল ঘটনা। জানা যায় নাছির উদ্দিন জনতা ব্যাংক থেকে কোনো টাকাই তোলেননি এবং তার কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাটিও সাজানো। পুলিশ জানতে পারে- নাছির উদ্দিনের কাছ থেকে অন্তত ২০ জন টাকা পাবেন। রোববার কয়েকজনকে টাকা পরিশোধের কথা ছিল।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফ বাংলানিউজকে বলেন, নাছির উদ্দিনের মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। কিন্তু ছিনতাইয়ের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। পরে নাছির উদ্দিনের তথ্যানুযায়ী জনতা ব্যাংকে যোগাযোগ করলে লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়নি। একই সময়ে নাছির উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইলে পাওনাদারের কল আসে। পরে পুলিশের কাছে পুরো ঘটনা স্বীকার করে নাছির উদ্দিন।

শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফ জানান, রোববার মহিউদ্দিন নামে এক পাওনাদারকে দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল নাছির উদ্দিনের।

পটিয়ার স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটিয়া শান্তিরহাট বাজারের জোবায়ের প্লাজার মালিক নাছির উদ্দিন। পাঁচবছরের চুক্তিতে মার্কেটের দোকান ভাড়া দিয়েছিলেন বিভিন্নজনের কাছে। চুক্তির সময় সবার কাছ থেকে জামানত বাবদ নিয়েছিলেন বিভিন্ন অঙ্কের টাকা। চার-পাঁচ মাস আগে চুক্তির মেয়াদ শেষে নাছির উদ্দিন দোকান বুঝে নিলেও জামানতের টাকা ফেরত দেননি। এ নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল গত কয়েকদিন আগে। কয়েকজনকে জামানতের সেই টাকা পরিশোধের কথাও ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৮
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।