সোমবার (২০ আগস্ট) সকাল আটটায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার খাঁচায় কুকুরটি মারা যায়। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. শাহাদাত হোসেন শুভ বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, কুকুর সাধারণত ১০ বছর বাঁচে। হিমু হত্যা মামলার আসামি কুকুরটি প্রায় ছয় বছর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বেঁচেছিল।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির সদস্যসচিব ও কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, কুকুরটিকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কেজি ফ্রেশ গরুর মাংস দিতে হতো। মাসে এটির পেছনে গড়ে ১২ হাজার টাকা খরচ হতো। তারপরও কুকুরটি যত্নের সঙ্গে লালন করা হতো। আলাদা খাঁচা তৈরি করে একজন কেয়ারটেকারকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দেখভালের জন্য। দর্শকরা কৌতূহল নিয়ে ওই খাঁচার সামনে ভিড় করতো। কুকুরটির মৃত্যুতে একধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, মামলার আলামত হিসেবে আদালতের নির্দেশে তিনটি কুকুরকে অচেতন করে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। কিছু দিন পর দুইটি কুকুর মারা যায়। টিকে ছিল একটি।
এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সেবনের প্রতিবাদ করায় ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের ‘ফরহাদ ম্যানশন’ নামের ১০১ নম্বর বাড়ির চারতলায় হিমুকে হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দিয়ে নিমর্মভাবে নির্যাতন করে সেখান থেকে ফেলে দেয় অভিজাত পরিবারের কয়েকজন বখাটে যুবক।
গুরুতর আহত হিমু ২৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২৩ মে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। হিমু পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের ইংরেজি মাধ্যমের সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থী ছিল। হিমু গোপা মজুমদার ও প্রবীর মজুমদারের ছেলে।
এ ঘটনায় হিমুর মামা প্রকাশ দাশ অসিত বাদী হয়ে ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পাঁচলাইশ থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামি করা হয় ব্যবসায়ী শাহ সেলিম টিপু, তার ছেলে জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ, রিয়াদের তিন বন্ধু শাহাদাৎ হোসাইন সাজু, মাহাবুব আলী খান ড্যানি ও জাহিদুল ইসলাম শাওন।
২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ওই মামলায় এজাহারভুক্ত পাঁচজন আসামিকে অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ১৮ অক্টোবর পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ এসএম মজিবুর রহমান এ মামলায় ৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নুরুল ইসলাম এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। যাতে পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৮
এআর/টিসি