ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নারীদের চালক হিসেবে গড়ে তুলছেন আরেক নারী 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
নারীদের চালক হিসেবে গড়ে তুলছেন আরেক নারী  নারীদের বাইক চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রী। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: প্রথমে দিচ্ছেন আত্মবিশ্বাসের ঝুড়ি। দিচ্ছেন এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। তারপর একে একে বাইক চালানোর কৌশল রপ্ত করা শেখাচ্ছেন তিনি।  পড়ে গেলে আবারও উঠিয়ে সাহস দিচ্ছেন আর বলছেন, ‘এই-তো হচ্ছে, আপনিই পারবেন।’

রোববার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৫টা। নগরের সিআরবির শিরীষতলার সামনের জায়গায় এমন দৃশ্যেরই দেখা মিললো।

যেখানে নারীদের বাইক চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৮ম সেমিস্টারের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস রুনা।

পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাসে উঠার নোংরা প্রতিযোগিতা কিংবা যানজটে সময়ের অপচয়কে মেনে নিতে পারেননি রুনা।

 বাধ্য হয়ে শিখেন বাইক চালানো।  সেই থেকে এই ছাত্রী এখন নিজেই বাইক চালিয়েই ক্যাম্পাসে যান।  

শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, নারীদের আত্মবিশ্বাসী ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অর্ধ-শতাধিক নারীকে বাইক চালানও শেখাচ্ছেন তিনি।  
নারীদের বাইক চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রী।  ছবি: সোহেল সরওয়ারসরেজমিনে দেখা যায়, ৫০ বছর বয়সী মহিলা রেহেনা বেগম শিখছেন বাইক চালানো। বাইকের পেছনে এক হাত শক্ত হাতে ধরে আছেন রুনা।  অন্য হাতে দিচ্ছেন দিক নির্দেশনা।  পড়ে গেলে আবারও উঠিয়ে বাইক চালানোর কৌশল রপ্ত করাচ্ছেন।  মাঝে-মধ্যে প্রশিক্ষণার্থীদের সাহসও যুগাচ্ছেন।  

রুনা বাংলানিউজকে জানান, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বাসা থেকে ক্যাম্পাসে যেতে খুবই কষ্ট হতো। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে প্রায় সময় ক্লাসে দেরি হয়ে যেত।  মাকে বাইক কিনে দেওয়ার কথা বলার আগে তিনি আগে বাইক চালানো শিখে ফেলার পরিকল্পনা করেন।  কিন্তু শিখার জন্য কাউকে পাননি।  

এক মাস পরে এক বড় আপুর সহযোগিতায় তিনি বাইক চালানো শেখেন।  পরে মা তাকে একটি বাইক কিনে দেন।  এখন সেই বাইক দিয়ে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়াসহ প্রয়োজনীয় কাজ সারেন রুনা।  

যদিও শুরুর দিকে বাইকচালক হিসেবে পথেঘাটে কম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়নি রুনাকে। এমনকি  ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অনেক টিটকারিও শুনতে হয়েছে তাকে। তবে এখন বদলে গেছে সেসব চিত্র।  সবাই এখন বাইক চালানোকে প্রশংসার চোখে দেখেন।  

নিজে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেন অন্য মেয়েদেরও বাইক চালানো শেখাবেন।  সেই লক্ষে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে সিআরবির শিরীষতলার সামনের ফাঁকা জায়গায় অর্ধ-শতাধিক মেয়েকে বাইক চালানো শেখান।  অবশ্য এরজন্য তিনি কিছু পারিশ্রমিকও নেন।  

শুক্রবার, শনিবার ও বৃহস্পতিবার সপ্তাহে এ তিনদিন তিনি মেয়েদের বাইক চালানো শেখান।  ৮ দিনেই বাইক চালানোর পাকাপোক্ত করে দেন প্রশিক্ষণার্থীদের।  বর্তমানে ৩০ জন নারী কারও সহযোগিতা ছাড়াই বাইক চালাতে পারেন।  যাদের শেষ দুটি ক্লাস নিয়ে ছেড়ে দিবেন রুনা।  

হামিদা খাতুন পান্না (৪০)।  বেসরকারি একটি স্কুলের শিক্ষকতা করেন।  তিনি এই রুনা থেকে শিখে, এখন বাইক নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতে যান।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ছোটবেলা থেকে লক্ষ্য ছিলো, বাইক চালানো শিখব।  কিন্তু শিখতে পারিনি।  কারণ সুযোগটা হয়নি। পরে সুযোগ পেয়ে রুনার কাছ থেকে বাইক চালানো শিখি।  এখন সড়ক জীবন আমার কাছে অনেক সহজ হয়ে গেছে।  প্রতিদিন এই বাইক চালিয়ে স্কুলে পড়াতে যাই।  

তিনি বলেন, হালিশহরেও অনেক মহিলা বাইক চালানো শিখতে চায়।  সেখানে তাদের প্রশিক্ষণ দেবো।  

রুনা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশের মেয়েদের মোটরবাইক চালানোর বিষয়কে অনেক পরিবার মেনে নিতে চায় না।  অথচ তারা পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাসে কিংবা বিভিন্ন যানবাহনে উঠেন। পরিবারকে বিষয়টি বুঝতে হবে। একজন নারী বাইক চালানো মানে সে তার নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া। কে, কি বললো সেদিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।  সে লক্ষ্য নিয়ে নিজে বাইক চালানো শিখেছি আর অন্যকেও শেখাচ্ছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
জেইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।