রোববার (১২ আগস্ট) চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উদ্যোগে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া মেগা প্রকল্পের মনিটরিং কমিটির সভায় সভাপতিত্বের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের বাইরে গেলে আমরা আইন মানি আর দেশে আমরা কেন আইন মেনে চলি না, তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন গণপূর্তমন্ত্রী।
জলাবদ্ধতা নিরসন নেওয়া মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী।
যত্রতত্র গৃহস্থালি বর্জ্য, প্লাস্টিক পণ্য ও পলিথিন ফেলার সমালোচনা করে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা নিজেরাই তো সচেতন নয়। আমরা যখন সিঙ্গাপুর যাই, যখন খাই- এদিক ওদিক দেখি। সিগারেট খেলে একশ ডলার জরিমানা হয়। ওটা ফেললে দুইশ ডলার জরিমানা। এই যে ঢাকায় ছেলেমেয়েরা মারা গেলো, ট্রাফিক সিস্টেম না মেনে গাড়ি চলল। আমরা যদি ঠিকমত চলি, তাহলে পরিবর্তন করা সম্ভব। ’
আমাদের জনসংখ্যা বেশি হতে পারে উল্লেখ করে গণপূর্তমন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যেকটা রাস্তা হকারদের দখলে। উচ্ছেদ করতে গেলে আপনারাই বলবেন, মানবিক কারণে করা যাবে না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সবাই এ দেশকে নিয়ে প্রাউড ফিল করি। বিদেশে গেলে কেন সোজা হয়ে যাই? এখানে কেন সোজা না? সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে দুর্ঘটনা কমে যাবে। এখন সড়কে জেব্রা ক্রসিং হচ্ছে। সড়কের আইন যখন আসছে আমি কেবিনেটে বলেছি গ্রিন, রেড ও ইয়েলো লাইট দিতে। সিস্টেম যদি ইনট্রোডিউস করা হয়, ডেভেলপ করা হয়, তখন নগরবাসী অভ্যস্থ হবে যাবে। বিদেশে গাড়ি যখন চলছে চলছে। যখন গ্রিন লাইট জ্বলল, ব্যস গাড়ি আর চলবে না। তখন মানুষ রাস্তা পার হয়। ’
দেশে সিস্টেমের অভাব আঝে কি না জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আছে মানে? আমাদের চরিত্রগতভাবে অভাব আছে। একদিন ডিসি হিলে গিয়ে দেখেন কীভাবে মানুষ বাদাম খাচ্ছে। খোসা ফেলছে। কেন ফেলবে? ওটা তো ওয়াকিং প্লেস। ’
সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নাধীন সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অগ্রগতিতে আমি সন্তুষ্ট। তবে খালের দুই পাড়ে রাস্তা হলেই ভাল। যেভাবে আমাদের সেনাবাহিনী কাজ করছে। চট্টগ্রামের যে দুঃখ জলাবদ্ধতা, এটা ইনশাল্লাহ সমাধান হবে। সেটার ব্যবস্থা নিয়ে আমরা নেমেছি। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ভালো ফল মিলবে। ’
তিনি আরও বলেন, মেগা প্রকল্পে কিছু কাজ করছি আমরা। আর কিছুটা সিটি করপোরেশন ও ওয়াটার ডেভলপমেন্ট বোর্ড করছে। এটার একটা মেয়াদ আছে। ’
বর্ষা মৌসুমে যে কাজ করেছে, দেখলাম। সেই অগ্রগতিতে সন্তুষ্টির কথাও জানান গণপূর্তমন্ত্রী।
জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মাত্র এক শতাংশ অর্থের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, ওই টাকায় যা কাজ হবে তার মাত্র ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এরমধ্যেই সুফল মিলতে শুরু করেছে। তবে আমাদের অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে। যদি অভ্যাস পরিবর্তন করা খুব কঠিন। এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন জসসচেতনতা। জনগণ সচেতন না হলে ১০ হাজার, ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিলেও কোন সুফল মিলবে না। ’
সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রথম ডিপিপিতে ৩৬টি খাল আমরা রেখেছি। পরিষ্কার করা, খনন, দখলমুক্ত, রেটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, একপাশে রাস্তা, সিল্ট ট্রেপ, নিচু ব্রিজ-কালভার্ট উঁচু করা এবং এসংশ্লিষ্ট সব ইউটিলিটি লাইন উঁচু করা হবে। ’
আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যা করা প্রয়োজন সব করা হবে। সেনাবাহিনী দুঃসাহসিক কাজে হাত দিয়েছে। সমাধান হবেই হবে।
এসময় সিডিএ চেয়ারম্যান সচেতনতা সৃষ্টি করতে একটা প্রজেক্ট নেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
সভায় বিগ্রেডিয়ার জেনারেল রেজাউল মজিদ বলেন, ‘প্রকল্পে কর্ণফুলীতে যে রেগুলেটরগুলো নির্মাণ করা হবে সেগুলোর দায়িত্ব কাউকে না কাউকে দিতে হবে। সেটা কোনো বডি হতে পারে, যারা দেখাশোনা করবে।
লে. কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে নেভিগেশন ব্যবস্থাসহ স্লুইস গেট ও রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে, যা আমাদের দেশে প্রথম। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষিত লোক প্রয়োজন। প্রকল্পের আওতায় থাকা ৩৬টি খালের মধ্যে চাক্তাই খাল সিস্টেমে ২১টি এবং মহেশখাল সিস্টেমে ৯টি খাল যুক্ত। এর বাইরে আছে ছয়টি খাল। ইতিমধ্যে এক কোটি ১৪ লাখ সিএফটি ময়লা-মাটি অপসারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সভায় নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ ও হালিশহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজনীয়তার কথা জানান সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বন্দরের হাইড্রোগ্রাফার শামসুল আরেফিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৮
এসবি/টিসি