ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মার খাওয়ার ভয়ে পালায় শিশু, ‘নিরপরাধ’ ২ জন কারাগারে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৮
মার খাওয়ার ভয়ে পালায় শিশু, ‘নিরপরাধ’ ২ জন কারাগারে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ফয়সাল হোসেন (১০)

চট্টগ্রাম: সময় বিভ্রাটে পড়ে যথাসময়ে পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে না পেরে ইংরেজি পরীক্ষা দিতে পারেনি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ফয়সাল হোসেন (১০)। পরে বাসায় ফিরে বাবার হাতে মার খাওয়ার ভয়ে সেই ফয়সাল আর বাসায় ফিরেনি। সেখান থেকে ফয়সাল বিভিন্ন জায়গা ঘুরে নীলফামারী চলে যায়।

আর ফয়সালের পরিবার অপহরণের অভিযোগ এনে চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন শাহনাজ (২৭) ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে। এ মামলায় গত ১ মে গ্রেফতার হয়ে শাহনাজ ও বাবু নামে দুইজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

শনিবার (১১ আগস্ট) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরান খানের আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয় ফয়সাল হোসেন। পরে আদালত ফয়সালকে তার বাবার জিম্মায় দেন।

ফয়সাল ফিরোজপুর জেলার কলাখালী উদয়কাটি এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে। সে বাবা মায়ের সঙ্গে নগরের চান্দগাঁও কাজীরহাট এলাকায় থাকতো।

চান্দগাঁও থানা ঘুরে দেড় মাস আগে এ মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আসে তদন্তের জন্য। এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান পিবিআই’র উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জাহেদুজ্জামান চৌধুরী। মো. জাহেদুজ্জামান চৌধুরী বৃহস্পতিবার নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার রামগঞ্জের মো. কহিদুল ইসলামের বাড়ি থেকে ফয়সাল হোসেনকে উদ্ধার করে।

পিবিআই’র পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ফয়সাল হোসেনকে নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার রামগঞ্জের মো. কহিদুল ইসলামের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ফয়সাল নীলফামারীর সেই বাড়িতে অপহৃত হয়ে নয়, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ছিল অনাথ হিসেবে। ফয়সাল নিজেকে অনাথ পরিচয় দেওয়ার পর মো. কহিদুল ইসলাম ফয়সালকে তার বাড়িতে রেখে আরবি পড়ার জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়।

আদালতে ফয়সালের দেওয়া জবানবন্দিতেও উল্লেখ রয়েছে এমন তথ্য। ফয়সালের আদালতে দেওয়া জবানবন্দি মতে, গত এপ্রিলের ২৫ তারিখ বাসা সকাল ১১টার দিকে ইংরেজি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বের হয় ফয়সাল। বিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারে পরীক্ষা সকালে হয়ে গেছে। পরে সেখান থেকে টেম্পুতে করে লালদীঘির মেলায় যায়। সেখান থেকে বাসে করে যায় নিউমার্কেট। সেখান থেকে হেঁটে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন যায়। রেল স্টেশনে কেউ যাতে চিনতে না পারে সেজন্য স্কুল ড্রেস খুলে ফেলে। পাশের ফুটপাত থেকে ২০ টাকা দিয়ে একটি গেঞ্জি কিনে নেয়।

প্রতিদিন ২০০ টাকা বেতনে রেল স্টেশনে পানি টানার কাজ করে। একমাস কাজ করার পর ভালো না লাগায় ভোলা জেলায় নানার বাড়ি যাওয়ার জন্য অলংকার মোড়ে যায় ফয়সাল। সেখানে গাড়ি না পেয়ে আবার রেল স্টেশনে ফিরে আসে। পরে ট্রেনে করে প্রথমে চাঁদপুর এবং সেখান থেকে লঞ্চে করে ভোলা যায় সে। পুরো ঠিকানা না জানায় নানার বাড়ি খুঁজে পায়নি ফয়সাল। ভোলা থেকে বাসে করে ঢাকা চলে যায়। ঢাকা থেকে বাসের ছাদে করে চলে যায় নীলফামারী।

নীলফামারী ট্রাফিক মোড়ে ফয়সালকে একা বসে থাকতে দেখে ফল দোকানদার মো. কহিদুল ইসলাম তাকে নীলফামারী থানার ওসির কাছে নিয়ে যায়। বাড়ি ফিরতে হবে এ ভয়ে ওসির কাছে গিয়ে পরিবার সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেয় ফয়সাল। সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মা মারা গেছে এমন তথ্য দিলে ওসি ফয়সালকে মো. কহিদুল ইসলামের জিম্মায় দেয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. জাহেদুজ্জামান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে ফয়সালের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করি। ফেসবুকে ফয়সালের ছবিও প্রচার করা হয়। তথ্য পাওয়া যায় ফয়সাল নীলফামারীতে আছে। বুধবার (০৮ আগস্ট) চট্টগ্রাম থেকে নীলফামারীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে বৃহস্পতিবার পৌঁছে ফয়সালকে উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। ফয়সাল ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বেচ্ছায় আদালতে জবানবন্দি দেয় শনিবার। ’

মো. জাহেদুজ্জামান চৌধুরী জানান, ফয়সালের বাবার দায়ের করা মামলায় শাহনাজ ও বাবু নামে দুইজনকে চান্দগাঁও থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।

কারাগারে থাকা শাহনাজ ও বাবুর এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলেও জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. জাহেদুজ্জামান চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৮
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।