ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বরিশাল কলোনির নিয়ন্ত্রক ইউসুফকে খুঁজছে পুলিশ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৮
বরিশাল কলোনির নিয়ন্ত্রক ইউসুফকে খুঁজছে পুলিশ!

চট্টগ্রাম: ৩৫ বছর বয়সী মো. ইউসুফ। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার মোবারকপুর এলাকার চারণ মিয়ার ছেলে। এ পরিচয়ের চেয়েও তার বড় পরিচয় চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম মাদকস্পট বরিশাল কলোনির নিয়ন্ত্রক।

রেলওয়ের সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা মাদকের আখড়ার অন্যতম প্রভাবশালী মো. ইউসুফ। এ মাদকস্পটের অন্য নিয়ন্ত্রকেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হলেও ২০১৫ সালের পর থেকে অধরাই রয়ে গেছেন ইউসুফ।

কয়েকবছর ধরে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট চেষ্টা করেও গ্রেফতার করতে পারেনি ইউসুফকে। ইউসুফ ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট তৈরি করে সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

তবে নগর গোয়েন্দা পুলিশ ইউসুফকে গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশ এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, শুনেছি ইউসুফ ভারতে পালিয়ে গেছেন। তাকে আমরা খুঁজছি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দীর্ঘদিনের চেষ্টায় এ বছরের ২৩ মে বরিশাল কলোনি উচ্ছেদের পর এখন প্রায় মাদকমুক্ত সেই এলাকা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ বিভাগ এ উচ্ছেদ অভিযান চালায়।

সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, অনেকদিন ধরে পলাতক রয়েছে ইউসুফ। বরিশাল কলোনির ফেনসিডিল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিন্তু এখন আর সেই বরিশাল কলোনি নেই। আমরা উচ্ছেদ করেছি। এখানে আর কোনো মাদকস্পট গড়ে তুলতে দেওয়া হবে না।

এসএম মোস্তাইন হোসাইন বলেন, রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের নামে বাসা বরাদ্দ নিয়ে সেই বাসা বহিরাগত লোকদের কাছে ভাড়া দিয়েছিল। আর পর্যায়ক্রেমে সেই এলাকা মাদকের স্পটে পরিণত হয়।

পাঁচ থানায় ২৮ মামলা

মো. ইউসুফের বিরুদ্ধে নগরের চার থানা ও রেলওয়ে থানায় রয়েছে ২৮টি মামলা। নগরের ডবলমুরিং, সদরঘাট, কোতোয়ালী, চান্দগাঁও ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে দায়ের হওয়া অধিকাংশ মামলার চার্জশিট হয়েছে, কিছু মামলা তদন্তাধীনও রয়েছে। ডবলমুরিং থানায় ইউসুফের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৩টি মামলা, সদরঘাট থানায় রয়েছে ৯টি মামলা, কোতোয়ালী থানায় রয়েছে ৪টি মামলা, চান্দগাঁও থানায় রয়েছে ১টি মামলা ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় রয়েছে ১টি মামলা।

মাদক, অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের এসব মামলায় একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেলে গেলেও জামিনে বের হয়ে যান ইউসুফ। সর্বশেষ ২০১৫ সালে জামিনে বের হওয়ার পর থেকে পুলিশের জালে আর ধরা পড়েননি ইউসুফ।  

নগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, নগরের চার থানা ও রেলওয়ে থানায় মাদক, অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৮টি মামলা রয়েছে ইউসুফের বিরুদ্ধে।

ভারত থেকে নিয়ন্ত্রণ করতেন বরিশাল কলোনি

ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকেই বরিশাল কলোনির নিয়ন্ত্রণ করতেন মো. ইউসুফ। ভারত থেকে চট্টগ্রামে ফেনসিডিল নিয়ে আসার গডফাদার ছিলেন ইউসুফ। কুমিল্লা সীমান্ত হয়ে রেলের কিছু ‘অসাধু নিরাপত্তারক্ষীর’ সহায়তায় চট্টগ্রামে পৌঁছাতেন এসব ফেনসিডিল।

সর্বশেষ নগর গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৭ সালের ১৮ নভেম্বর বরিশাল কলোনি থেকে ৬৫০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পরে সদরঘাট থানায় মামলা দায়ের হয়। তদন্ত শেষে নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক অশোক কুমার চৌহান পলাতক মো. ইউসুফসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন।

অশোক কুমার চৌহান বাংলানিউজকে বলেন, মো. ইউসুফ ভারত থেকে বিভিন্ন কৌশলে ফেনসিডিল নিয়ে আসতেন বলে জানতে পেরেছি। কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে এসব ফেনসিডিল বাংলাদেশে প্রবেশ করতো।

মো. ইউসুফের সঙ্গে বেশ কিছু শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে বলে জানান অশোক কুমার চৌহান। তবে তিনি কারও নাম প্রকাশ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৮
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।