ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

এক্সেস রোড পারাপারে কাঠের সাঁকো!

সুবল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৮
এক্সেস রোড পারাপারে কাঠের সাঁকো! নির্মাণকাজের জন্য আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের একাংশ বন্ধ থাকায় কাঠের সাঁকো দিয়ে রাস্তা পারাপার। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: খানা-খন্দে ক্ষতবিক্ষত নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের ‘নরক যন্ত্রণা’ থেকে মুক্তি দিতে উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ২ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ আগ্রাবাদ-হালিশহর এক্সেস রোডের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে।

এর আওতায় আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের বাদামতল মোড় থেকে বড়পুল-নয়াবাজার পর্যন্ত সড়কের একপাশ বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যপাশ দিয়ে পথচারী ও উভয়মুখী যান চলাচল করছে।

এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীদের দুর্ভোগ লেগেই আছে। বৃষ্টি হলে এ দুর্ভোগ আরও সীমাহীন পর্যায়ে চলে যায়।

এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে রাস্তার একাংশে পারাপারের জন্য একাধিক কাঠের সাঁকোও তৈরি করেছেন স্থানীয়রা। পথচারীরা সাঁকো পেরিয়ে যাতে রাস্তায় উঠতে পারেন।  

নির্মাণকাজের জন্য আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের একাংশ বন্ধ থাকায় কাঠের সাঁকো দিয়ে রাস্তা পারাপার।   ছবি: সোহেল সরওয়ারআগ্রাবাদের বেপারিপাড়া এলাকার সালাহ উদ্দিন রানা নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, নরক যন্ত্রণা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজ করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে এ সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সড়ক জুড়েই বড় বড় গর্ত। যেখানে গাড়িতে যাতায়াত করতে দুর্বিষহ যন্ত্রণা পোহাতে হয়। দীর্ঘদিন পর এ সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হওয়াটা আমাদের জন্য অনেকটা স্বস্তির। নির্মাণকাজের সড়কের একপাশ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যপাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। এতে রাস্তার একপাড়ে খাল আর অন্যপাড়ে দ্বীপের মতো দেখাচ্ছে। যেই পাশের সড়ক বন্ধ রয়েছে বৃষ্টি হলে সেই পাশে পানি জমে গিয়ে ছোট নদীতে রূপ নেয়। এতে আমাদের সীমাহীন কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেই কষ্ট কিছুটা কমাতে এবং রাস্তা পারাপারের জন্য নিজ উদ্যোগে আমরা কাঠের সাঁকো তৈরি করেছি। ’

রাশেদ নামে আরেক স্থানীয় বাংলানিউজকে জানান, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে যারা দায়িত্ব পেয়েছে, তাদের উচিত ছিলো এসব এলাকায় যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা করা। কিন্তু তারা তা করেনি। তাই দুর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করে পারাপারের জন্য স্থানীয়রা মিলে রাস্তার একপাশে কাঠের সাঁকো তৈরি করেছে। যে সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন লাখো পথচারী যাতায়াত করছে।
নির্মাণকাজের জন্য আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের একাংশ বন্ধ থাকায় কাঠের সাঁকো দিয়ে রাস্তা পারাপার।   ছবি: সোহেল সরওয়ারআগ্রাবাদ এক্সেস রোড ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন আগ্রাবাদ এক্সেস রোড দিয়ে হাজারো যান চলাচলের পাশাপাশি লাখো পথচারী যাতায়াত করেন। নগরের আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক এলাকা, রহমানবাগ গুলবাগ, শান্তিবাগ, বেপারিপাড়া, পানওয়ালাপাড়া, বড়পুল, ছোটপুল, মুহুরিপাড়া, হালিশহর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরা অনেকটা এক্সেস রোডের ওপরই নির্ভরশীল।

ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড খানাখন্দে বড় বড় গর্ত। সড়কে এসব বড় বড় গর্তগুলো পেরিয়ে বাসগুলো কোনমতে যাতায়াত করলেও ছোট গাড়ি চলাচলে খুব দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক সময় যাত্রীদের নামিয়ে সড়কের বড় গর্তগুলো পার হতে হয় গাড়ি চালকদের। সড়কের নির্মাণকাজের জন্য আগ্রাবাদ থেকে হালিশহরগামী বামপাশ বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই পাশ দিয়ে চলাচলের জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে কাঠের সাঁকো তৈরি করেছেন। যাতে নির্বিঘ্নে রাস্তা পারপার করতে পারেন।

এতে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দার পাশাপাশি লাখো পথচারী। পরবর্তীতে দুর্ভোগের বিষয় চিন্তা করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কর্তৃপক্ষ এ সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেন।

নির্মাণকাজের জন্য আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের একাংশ বন্ধ থাকায় কাঠের সাঁকো দিয়ে রাস্তা পারাপার।   ছবি: সোহেল সরওয়ারচসিক সূত্রে জানা যায়, জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে আইসিজিপি’র আওতায় ৪১ কোটি ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে আগ্রাবাদ-হালিশহর এক্সেস রোডের ২ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের ১৯ মে পর্যন্ত ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘চসিকের উদ্যোগে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের উন্নয়নে এবং সম্প্রসারণে নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। জনদুর্ভোগের বিষয় বিবেচনায় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্দেশনায় শিগগিরই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার জন্য একপাশ বন্ধ রাখা হয়েছে। ’

এক্সেস রোডের যেই পাশ বন্ধ রাখা হয়েছে, সেই পাশে অসুবিধে হলে প্রয়োজনে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের ছয়লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এক্সেস রোডের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেন সিটি মেয়র। অতি বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের প্যাচওয়ার্ক কার্যক্রম অব্যাহত রাখারও নির্দেশনা প্রদান করেন।

জনদুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাতারাতি তো এক্সেস রোডের নির্মাণকাজ শেষ করা যাবে না। চসিকের নির্দেশনায় সড়কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের কিছুটা কষ্ট পেতে হচ্ছে। যেখানে আমাদের করার কিছু নেই। দীর্ঘদিন থেকে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড নিয়ে এলাকাবাসীদের সীমাহীন যন্ত্রণা ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতেই নির্মাণকাজ চলছে। ’

নির্মাণকাজ চলমানের কারণে জনসাধারণের সাময়িক অসুবিধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এ জনপ্রতিনিধি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৮

এসবি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।