সাংবাদিক নেতারা যুক্ত বিবৃতিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতির এ অভিযোগের তীব্র নিন্দা জানান এবং এ ধরনের মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার, সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী, নির্বাহী সদস্য আসিফ সিরাজ, নওশের আলী খান বিবৃতিতে বলেন, গত ২৯ জুন রাতে ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক কন্যা রাইফার মৃত্যু হয়।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাটি তদন্তে এলে ৩০ জুন রাতে সাংবাদিক নেতাদের বক্তব্য জানার জন্য তাদের ম্যাক্স হাসপাতলের একটি বৈঠকে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান। আমন্ত্রণ পেয়ে সাংবাদিক নেতারা ওই বৈঠকে যোগ দিলে বক্তব্যের একপর্যায়ে বিএমএর কিছু নেতা সাংবাদিকদের বক্তব্য দানে বাধা দেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা সভা বয়কট করে বেরিয়ে এসে বিক্ষোভ করেন।
সাংবাদিক কন্যা রাইফার মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ নিয়মতান্ত্রিক ভাবে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এবং শহীদ মিনারে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে। এসব সমাবেশ চলাকালে এক মিনিটের জন্য রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি কিংবা উচ্ছৃঙ্খলতা সৃষ্টি করেনি। অথচ বিএমএর ব্যানারে সড়ক অবরোধ করে রোগীদের জিম্মি করে সভা-সমাবেশ করে সাংবাদিকদের চিকিৎসা না করার হুমকি দেন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের পর চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা কখনোই কোনো হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকের সামনে সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং করেনি। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিকরা কীভাবে চিকিৎসাসেবার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে?
বিবৃতিতে তারা বলেন, গত ৪ জুলাই মধ্যরাতে কিছু চিকিৎসকের একটি সভায় বিএনপি নেতা ও ড্যাবের সাবেক সভাপতি ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থা অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য চিকিৎসকদের আহ্বান জানান। এর ধারাবাহিকতায় আগস্টে ধর্মঘট ডেকে হঠাৎ করে এক মাস আগে রোববার (৮ জুলাই) থেকে চট্টগ্রামের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীদের বের করে দিয়ে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেওয়া অমানবিক এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি এবং ওই ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতির নামে চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধের যে প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি পাঠানো হয় তা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) মতো একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মেইল থেকে পাঠানো হয়েছে। যা দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) নির্দেশ দেন। সরকার যখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে তখন সরকারের এ উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি চক্র ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
তারা বলেন, বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ এবং উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চায়। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল সরকারের এ উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করতে রোগীদের জিম্মি করে অবৈধ ভাবে ধর্মঘট ডেকে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলছে। ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’ চাপানোর মতো কল্পকাহিনি তৈরি করে রোগীদের জিম্মি করে ডাকা ধর্মঘটের সঙ্গে চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা কোনো ভাবেই সম্পৃক্ত নন। চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অংশীদার। সাংবাদিকরা রাইফা মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।
রাইফা খুনের তদন্তকে ঘিরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা
রোগী জিম্মি করে ‘খেলা’ বন্ধের দাবি ক্যাবের
অভিযানের মুখে হঠাৎ স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ ঘোষণা চট্টগ্রামে
৩ ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ দিলেন নাসিম
সেই ম্যাক্স হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৮
এআর/টিসি