ছোট্ট লম্বাটে বৈঠকখানার দুই পাশের দেয়ালে ছবি, লেখা, রেখা মিলে অর্ধশতাধিক সংগ্রহ। লাল-সবুজের এ দেশের একেকটি অধ্যায়।
‘চট্টলবীর’ খ্যাত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর চশমা হিলের বৈঠকখানার চিত্রটা এখনো অমলিন। চট্টগ্রামের ষোলশহরের মেয়র গলিতে তার বাসভবনটি খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় না। ছোট বড় সবাই চেনে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে অন্তরঙ্গ একটি গ্রুপ ছবি আছে চেয়ারের বাম পাশের দেয়ালে। সাদা-কালো যুগের ছবি। কিন্তু আবেদনটা এখনো প্রাণবন্ত। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে কর্মবীর মহিউদ্দিনের অনেক ছবি। নির্বাচনী প্রতীক হারিকেন তুলে দিচ্ছেন, শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা উড়িয়ে দিচ্ছেন। ছবিই বলছে, বহুল আলোচিত পার্বত্য শান্তি চুক্তির সময়ও উপস্থিত ছিলেন মহিউদ্দিন।
কবি শামসুর রাহমানের সঙ্গে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছবি আছে একটি।
রাজনীতির মাঠে, জনসমুদ্রে বীরের বেশে মহিউদ্দিনের একাধিক ছবি সোনালি ফ্রেমে বন্দি রয়েছে দুই দেয়ালে। সব কিছু ছাপিয়ে কিছু পারিবারিক ছবিতে চোখ ভিজে যায় দর্শকের। মহিউদ্দিনের মেয়ে টুম্পাকে কে না চেনে। তার হাসিমুখের ছবিটা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছবিটা হৃদয়ে নাড়া দেবেই।
শিশুবান্ধব মহিউদ্দিনকে ক’জনই বা চেনে। তার কোলে, কাঁধে শিশুরা। হোক না নিজের ছেলে কিংবা নাতি। একটি ছবিতে কাঁধের দুই পাশে দুই পা ছড়িয়ে বসে আছে বড় ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং কোলে টুম্পা। আরেক ছবিতে বাবার কাঁধে তার ছোট্ট ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীনকে। মহিউদ্দিনের নাতি (মেয়ের ছেলে) সাদমানের উপস্থিতি অনেক ছবিতে দেখা গেল। কখনো বিজয়ী মহিউদ্দিনকে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছে, কখনো কোলে, কখনো পিঠে। পিয়া ও পাপিয়ার ছবিও কথা বলছে বেশ। হাসিনা মহিউদ্দিনও স্বমহিমায় জায়গা করে নিয়েছেন চারপাশে।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দৈনিক আজাদীর ১৯৯৪ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি টেলিগ্রামে চোখ আটকায় অতিথিদের। কালো অক্ষরে আট কলামজুড়ে শিরোনাম ‘মহিউদ্দিন মেয়র নির্বাচিত’। পাশে চট্টগ্রামের আধুনিক দৈনিক পূর্বকোণের আরেকটি টেলিগ্রাম। সেটি ২০০৫ সালের ১০ মে প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনাম ‘মহিউদ্দিনের হ্যাটট্রিক বিজয়’। এ দুইটি টেলিগ্রাম জানিয়ে দিচ্ছে মহিউদ্দিন কতটা জনপ্রিয় ছিলেন, কতটা আপন ছিলেন চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের। আরও একটি বাঁধাই করা কাগজ আছে বৈঠকখানায়। সেটি জনকণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠা। শিরোনাম ‘চলে গেলেন চট্টলবীর’।
একনজরে বইয়ের তাকে চোখ বুলিয়ে দেখা গেল, বিচিত্র সব বই। ‘ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু’, ‘মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতি’, ‘জীবন স্রোতে’, ‘শতাব্দীর বরপুত্র বঙ্গবন্ধু’, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা তদন্ত ও বিচার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস’, ‘চরমপত্র’, ‘আমরা তখন যুদ্ধে’, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’, ‘অখ- লালন সংগীত’, ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’, ‘শরৎ রচনাবলী’ ইত্যাদি। বেশ কিছু বাংলা কোরআন, হাদিস শরিফও রয়েছে সংগ্রহশালায়।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ছায়ার মতো কাটিয়েছেন ওসমান গনি। তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরী এ বৈঠকখানাতে বসেই মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন। এটি তার বাবার স্মৃতি। আগে মাটির দেয়াল ছিল। পরে সেমিপাকা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর বৈঠকখানায় প্রথমে বসতেন কাঠের সোফায়। ইন্তেকালের দুই-তিন বছর আগে চেয়ারটি আনা হয়। এখন ওই চেয়ারে হাসিনা মহিউদ্দিন বসেন। অবশ্য, তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবদ্দশায়ও ওই চেয়ারে বসতেন।
কথা প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছোট ছেলে বোরহানের সঙ্গে। তিনি বললেন, বাবার স্মৃতিধন্য এ বৈঠকখানায় অল্পকিছু স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। এর বাইরে অসংখ্য পেপার কাটিং, নির্বাচনী পোস্টার, শুভেচ্ছা স্মারক, বাবাকে দেওয়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নগরের চাবি, নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে পচা-গলা মরদেহ তোলা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছবি রয়েছে। এসব নিয়ে কিছু একটা করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৮
এআর/টিসি