ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কারাবন্দিদের ঈদ, খাবারে পোলাও-মাংস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৪ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
কারাবন্দিদের ঈদ, খাবারে পোলাও-মাংস চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার

চট্টগ্রাম: ঈদুল ফিতরের আগে শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরে মানুষের ভিড়। সবাই ভেতরে যাচ্ছেন একে একে। সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। কারাগারে বন্দি আত্মীয়-স্বজনদের ঈদের আগে একনজর দেখবেন। কেউ কেউ নিয়ে এসেছেন নতুন কাপড়। কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সেসব নতুন কাপড় পৌঁছে যাবে কারাগারে বন্ধি থাকা আত্মীয়দের কাছে।

কাজী নেয়ামুল করিম নোমান ১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন। বন্ধুকে হত্যা মামলায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সাজা ভোগ করছেন তিনি।

১৭ বছরে জেলখানার ভেতর পরিবারবিহীন কাটিয়েছেন ৩৪টি ঈদ। ৪২ বছর বয়সী কাজী নেয়ামুল করিম নোমানের বাড়ি মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে।
পিতার নাম কাজী করিমুল হক।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সাক্ষাতকার কক্ষে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় নোমানের। নোমান জানালেন জেলখানার ভেতরে তার অভিজ্ঞতার কথা।

নোমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘১৭ বছর ধরে কারাগারে থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ৩৪টি ঈদ কাটিয়েছি এ কারাগারের ভেতরেই। একসময় খারাপ লাগলেও এখন আর খারাপ লাগে না। কারাগারই এখন আমার একটি পরিবার। ’

নোমান বলেন, ‘ঈদে আমরা বন্দিরা নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করি। আমরাও নতুন জামা পড়ি। সবাই একসাথে নামাজ পড়ি। একসাথে খাই। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে না পারার দুঃথ ভুলে যাই। ’

নোমান ২০০১ সালে নগরের বাকলিয়া ডিসি রোডে শহীদ হত্যা মামলার একমাত্র আসামি। ২০০৬ সালে মহানগর দায়রা জজ আদালত নোমানকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। নোমান বলেন, ‘তখন বয়স কম ছিল। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারি হয় বন্ধু শহীদের সাথে। সে মারা যায়। কিন্তু আমি তাকে মেরে ফেলতে চাইনি। আমি অনুতপ্ত। ’

১৮৫৩ জন বন্দি ধারণ ক্ষমতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন বন্দি আছেন ৭৪৮৭ জন। পুরুষ আছেন ৭১৪১ জন এবং নারী আছেন ৩৪৬ জন। এসব বন্দিদের জন্য ঈদ উপলক্ষে কারা কর্তৃপক্ষের রয়েছে বিশেষ আয়োজন।

কারাগার সূত্র জানায়, কারাবন্দিরা সবাই একসাথে নামাজ পড়বেন কারাগারের ভেতর। তাদের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন জামার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বেসরকারি কারা পরিদর্শক আজিজুর রহমান আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কারাগারকে সুন্দরভাবে পরিচালনার চেষ্টা করি। এবার ঈদে আমি নিজ উদ্যোগে এবং সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ২৫০টি লুঙ্গি ও ৩৫০টি শাড়ি দিয়েছি। কারাবন্দিরাও যাতে ঈদে অন্তত হাসি-খুশিতে কাটাতে পারে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের দিন কারাবন্দিরা সবাই একসাথে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা। সবাই নতুন জামা-কাপড় পড়বেন। পরিবারের পক্ষ থেকে কারাবন্দিদের অনেকেই নতুন জামা পেয়েছেন। আমরাও ব্যবস্থা করেছি। চেষ্টা করছি তারা যেন ভালো একটি ঈদ উপহার পান। কারাগার মানে বন্দিশালা নয়, শুদ্ধাগার।

ইকবাল কবির চৌধুরী জানান, ঈদের দিন সকালে কারাবন্দিদের খাবার হিসেবে থাকবে সেমাই, দুপুরে ভাত, মাছ, আলুর দম, সালাদ এবং রাতে পোলাও ভাত, মাংস, সালাদ, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবার।

ইকবাল কবির চৌধুরী বলেন, এছাড়া কারাবন্দি অনেকের পরিবার বাসা থেকে ঈদের দিন খাবার নিয়ে আসবেন তাদের জন্য। শুধু ঈদের দিন আমরা বিশেষ অনুমতি দিবো। সমাজের বিত্তবানরা অনুমতি সাপেক্ষে ঈদে কারাবন্দিদের কাপড় দেন।

নারী বন্দিদের ৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের পরিচর্যায় কারাগারের অভ্যন্তরে কারা কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহায়তায় অপরাজেয় বাংলাদেশ নামক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে ‘ডে কেয়ার সেন্টার’।

কারাগারে মহিলা ওয়ার্ডে মা দের সাথে রয়েছে ০ থেকে ৬ বছর বয়সী ৫৫ জন শিশু। তার মধ্যে ২৬ জন ছেলে এবং ২৯ জন মেয়ে।

ডে কেয়ার সেন্টারের কাউন্সিলর জিনাত আরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ৫৫ জন শিশুর জন্য আমরা নতুন জামার ব্যবস্থা করেছি। তাদের নতুন জুতা সরবরাহ করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮

এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।