নগরের আমবাগানের ঝাউতলা এলাকার বিহারি কলোনির দৃশ্য এটি। পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে বিহারি কলোনির জারদৌসি কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
এ কাজে তাদের কোনো মেশিনের প্রয়োজন হয় না। মেশিন বলতে তাদের দুই হাত।
সরেজমিনে দেখা যায়, কারিগররা ঘরের মেঝেতে কাঠের পাটাতনে শাড়ির চার কোণায় বাঁধছেন। আর বাহারি রঙের পাথর বসিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের পোশাক।
তারা জানান, নকশার কাজে লেদার জর্জেট, পাথর, জরি, চুমকি, মাল্টি পুঁতি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এরপর কাপড় ও কাজের মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হয়। এখানে শাড়ির দাম নির্ধারণ হয় ডিজাইন ভেদে। একই অবস্থা থ্রিপিসও।
পাপ্পু বুটিকসের মালিক মো. পাপ্পু বাংলানিউজকে বলেন, এবারের ঈদে বেশি চাহিদা লেহেঙ্গা শাড়ির। কাজ ভেদে প্রতিটি শাড়ির দাম ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তিনি জানান, পূর্বপুরুষের কাছ থেকে শিখে প্রায় ২২ বছর ধরে তিনি কাজ করছেন। সম্পূর্ণ একটি শাড়ি তৈরি করতে ৯ জন শ্রমিকের তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। একটি শাড়িতে তারা ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পান। নিজবাড়িতে কাজ করেন বলে দোকান ভাড়া দিতে হয় না। তাই তাদের যা আয় তা-ই লাভ। এ ছাড়া পাথর লাগানোর কাজে স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের পাওয়ায় খরচও তেমন পড়ে না।
আরেক পাপ্পু বুটিকস হাউসের মালিক মো. খালিদ জাফর (পাপ্পু) জানান, এবারের ঈদে জর্জেট কাপড়, ডবল জর্জেট, সিল্ক কাপড় ও সাপুড়া সিল্কের চাহিদা বেশি।
বিদেশি কাপড়ের ভিড়ে জৌলুস হারাচ্ছে জারদৌসি কাজ
বিহারি কলোনির কারিগররা জানান, ২০ বছর আগে ঈদ মৌসুমে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব ছিল। একেকটা কারিগরের আওতায় ৩০-৪০ জন শ্রমিক কাজ করতেন। কিন্তু বর্তমানে বিদেশি কাপড়ের ভিড়ে জৌলুস হারাচ্ছে জারদৌসি কিংবা চুমকি-জরির কাজ। এখন মাত্র ১০-১৫ জন বিক্ষিপ্তভাবে এ কাজ করছেন। বড় কোনো উৎসব ঘিরেই তাদের কাজ বাড়ছে।
মো. খালিদ জাফর (পাপ্পু) বলেন, ‘২০১০ সালের দিকেও ৩০ জন কর্মচারী নিয়ে কাজ করেছি। ঈদে তখন ৫০ হাজার টাকা আয় হতো। কিন্তু এখন ৪ জন কর্মচারী নিয়ে ১০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এর কারণ বিদেশি শাড়ি ও থ্রিপিস অনেক সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। ’
মো. পাপ্পু বলেন, দিন দিন কাজ কমে যাচ্ছে। বিদেশি কাড়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেলে, বিহারি কলোনির এ কাজ হারিয়ে যাবে। ২২ বছর আগে এক লাখ টাকা আয় হলেও এখন মাত্র ৩০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।
তিনি সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৮
জেইউ/টিসি/