শুক্রবার (২৫ মে) রাত ১২টায় রেলওয়ে স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্টেশনের সামনের খোলা জায়গায় কয়েকশ’ ছিন্নমূল মানুষ শুয়ে আছেন। যাদের একজন মকবুল আহমেদ।
ফেনীর বাসিন্দা মকবুল বাংলানিউজকে জানান, স্ত্রী না থাকলেও ২ মেয়ে আর ১ ছেলে আছে তার। তবে তারা কেউ স্বাবলম্বী না হওয়ায় ষাটোর্ধ্ব বয়সে এসেও রেল স্টেশন এলাকায় ভিক্ষা করেন তিনি।
রাতে খোলা আকাশের নিচে কেন থাকেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সারাদিন ভিক্ষা করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। এসব দিয়ে নিজে চলে বাড়িতেও কিছু টাকা পাঠাই। ঘর ভাড়া করে থাকার সুযোগ কই?
তবে সরকার ছিন্নমূলদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করলে এভাবে খোলা আকাশের নিচে তাকে থাকতে হতো না বলে জানান তিনি।
৩ বছর আগে রেলে কাটা পড়ে ডান পা হারায় রবিউল ইসলাম। তবুও জীবিকার তাগিদে সে পড়ে আছে রেল স্টেশন এলাকায়। সারাদিন ভিক্ষা করে, হকারি করে যা আয় হয়, তার সবটুকু দিয়ে চলে রবিউলের সংসার।
৯ বছর বয়সী রবিউল বাংলানিউজকে জানায়, পা হারিয়েছি এর জন্যে কোনো আফসোস নেই। তবে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। মায়ের মুখে দু’বেলা আহার তুলে দিতে চাই।
এ সময় চোখের কোণা দিয়ে অশ্রু ঝরছিলো তার। এক হাত দিয়ে তা মুছতে মুছতে আবার শুরু করে কথা। জানায়, ‘ভাইয়া স্টেশনের কর্মচারী জাকির সামনে পেলেই খুব মারে। টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। সারাদিন এক টাকা দুই টাকা করে জমানো টাকাগুলো একসঙ্গে নিয়ে ফেললে খুব কষ্ট লাগে। কান্না চলে আসে। ’
শুধু ষাটোর্ধ্ব মকবুল কিংবা ৯ বছরের রবিউল নয়, রেল স্টেশন এলাকায় এরকম ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা হাজারের বেশি। যাদের অনেকেই খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান।
সব নির্যাতন, অপমান সহ্য করে দিনের পর দিন অতিবাহিত করেন। এরপরেও এসব থেকে মুক্তি মেলে না। তবে যেদিন মেলে সেদিন আর দেহে প্রাণ থাকে না!
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৬ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৮
এমআর/এআর/টিসি