ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

যেদিন মুক্তি মেলে সেদিন দেহে প্রাণ থাকে না!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
যেদিন মুক্তি মেলে সেদিন দেহে প্রাণ থাকে না! রাতে ছিন্নমূল মানুষদের মাথা গুঁজার ঠাই নগরের রেল স্টেশন। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: খোলা আকাশের নিচে সারি সারি শুয়ে আছেন কিছু মানুষ। কেউ দিনমজুর, কেউ ভিক্ষুক।কারও শরীরের নিচে নিউজপ্রিন্ট, কারও গামছা!

বয়স, পেশা কিংবা শরীরের আকৃতি ভিন্ন ভিন্ন হলেও তাদের সবার ঠিকানা একটি। সারাদিনের সমস্ত ব্যস্ততা শেষে এখানেই মাথা গুঁজেন সবাই। নগরের চট্টগ্রাম নতুন রেলওয়ে স্টেশনের রাতের চিত্র এটি।

শুক্রবার (২৫ মে) রাত ১২টায় রেলওয়ে স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্টেশনের সামনের খোলা জায়গায় কয়েকশ’ ছিন্নমূল মানুষ শুয়ে আছেন। যাদের একজন মকবুল আহমেদ।

ফেনীর বাসিন্দা মকবুল বাংলানিউজকে জানান, স্ত্রী না থাকলেও ২ মেয়ে আর ১ ছেলে আছে তার। তবে তারা কেউ স্বাবলম্বী না হওয়ায় ষাটোর্ধ্ব বয়সে এসেও রেল স্টেশন এলাকায় ভিক্ষা করেন তিনি।

রাতে খোলা আকাশের নিচে কেন থাকেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সারাদিন ভিক্ষা করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। এসব দিয়ে নিজে চলে বাড়িতেও কিছু টাকা পাঠাই। ঘর ভাড়া করে থাকার সুযোগ কই?

রাতে ছিন্নমূল মানুষদের মাথা গুঁজার ঠাই নগরের রেল স্টেশন।  ছবি: সোহেল সরওয়ার

তবে সরকার ছিন্নমূলদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করলে এভাবে খোলা আকাশের নিচে তাকে থাকতে হতো না বলে জানান তিনি।

৩ বছর আগে রেলে কাটা পড়ে ডান পা হারায় রবিউল ইসলাম। তবুও জীবিকার তাগিদে সে পড়ে আছে রেল স্টেশন এলাকায়। সারাদিন ভিক্ষা করে, হকারি করে যা আয় হয়, তার সবটুকু দিয়ে চলে রবিউলের সংসার।

৯ বছর বয়সী রবিউল বাংলানিউজকে জানায়, পা হারিয়েছি এর জন্যে কোনো আফসোস নেই। তবে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। মায়ের মুখে দু’বেলা আহার তুলে দিতে চাই।

এ সময় চোখের কোণা দিয়ে অশ্রু ঝরছিলো তার। এক হাত দিয়ে তা মুছতে মুছতে আবার শুরু করে কথা। জানায়, ‘ভাইয়া স্টেশনের কর্মচারী জাকির সামনে পেলেই খুব মারে। টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। সারাদিন এক টাকা দুই টাকা করে জমানো টাকাগুলো একসঙ্গে নিয়ে ফেললে খুব কষ্ট লাগে। কান্না চলে আসে। ’

শুধু ষাটোর্ধ্ব মকবুল কিংবা ৯ বছরের রবিউল নয়, রেল স্টেশন এলাকায় এরকম ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা হাজারের বেশি। যাদের অনেকেই খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান।

সব নির্যাতন, অপমান সহ্য করে দিনের পর দিন অতিবাহিত করেন। এরপরেও এসব থেকে মুক্তি মেলে না। তবে যেদিন মেলে সেদিন আর দেহে প্রাণ থাকে না!

বাংলাদেশ সময়: ০৪১৬ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৮

এমআর/এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।