রমজানে প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাসান ওয়ারেসের এ বাড়ির অতিথি ছিন্নমূল, অভাবী রোজাদাররা। ১৯৮০ সাল থেকে বাবুর্চি রেখে পরম যত্নে তাদের সেহেরি খাওয়ানো হয় এ বাড়িতে।
কুয়েত থেকে গত ১৩ মে শুধু গরিবদের সেহেরি-ইফতার তদারকির জন্য বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন মোহাম্মদ হাসান ওয়ারেস। বার্ধ্যকের কারণে শরীরে অসুখ বাসা বেঁধেছে তার। তবুও নিজে হেঁটে হেঁটে দেখেন তৃপ্তি ভরে সেহেরি খাচ্ছেন শত শত মানুষ।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ কাজটি করছি। আশাকরি, আমার দেখাদেখি সমাজের বিত্তবানরাও এগিয়ে আসবেন।
স্বামী ওয়ারেসকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেন সৈয়দা শাহিনূর বেগম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ছোটবেলায় আমার স্বামী অনেক কষ্ট করেছেন। ৫৩ বছর ধরে কুয়েতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ইলেকট্রনিকসের ব্যবসা করেন। সেখানে আমরা অনেক আয়েশের মধ্যে রমজান কাটাতে পারতাম। কিন্তু গরিবদের সেহেরি-ইফতার তদারকির জন্য দেশে ছুটে এসেছি। এদের ভালোবাসাই আমাদের বড় পাওনা। এদের খুশিতেই আমরা খুশি।
তিনি বলেন, আমাদের তিন ছেলে, পাঁচ মেয়ে। একটি মেয়ে দেশে থাকে। বাকি সবাই প্রবাসে। কেউ কুয়েত, কেউ যুক্তরাষ্ট্র কিংবা কানাডায়। বোয়ালখালীর গ্রামের বাড়িতে আমরা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি হাসপাতাল গড়েছি। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় গরিবদের। স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি বেশ কয়েকটি। আমরা চাই গরিবদের মুখে হাসি ফুটুক। তারা ভালো থাকুক।
বাবুর্চি জয়নাল আবেদিন, জামাল উদ্দিন ও মোহাম্মদ ফিরোজ ১২ জন খাদেম প্রতিদিন সেহেরি-ইফতারে গরিবদের সেহেরি ও ইফতারের এ মহাযজ্ঞ সারেন। বিশাল দুইটি ডেকচিতে রান্না হয় সাদা ভাত। অপেক্ষাকৃত ছোট ডেকচিতে মাছ বা মাংস। সমান ডেকচিতে দেখা গেল চনার ডাল।
জামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছরই বাড়ছে সেহেরির অতিথি। রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পাঁচ শতাধিক মানুষের আয়োজন করতে হয়। সবাই তৃপ্তি ভরে খায়। দোয়া করে। খুব ভালো লাগে এ কাজ করতে।
৬২ বছর বয়সী আবদুর রশিদের বাড়ি আনোয়ারার বটতলীতে। ১২-১৪ বছর দারোয়ানের চাকরি করেছেন পাথরঘাটা এলাকায়। এখন তিনি পঙ্গু। প্রতিদিন সেহেরিতে আসেন ওয়ারেস টাওয়ারে। তিনি বলেন, ‘গরিবদের অভিভাবক ওয়ারেস সাহেব। তার উসিলায় আমরা ভালোভাবে সেহেরিটা খেতে পারছি। রোজা রাখতে পারছি। উনার জন্য আমরা দোয়া করি। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৪০০ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৮
এআর/টিসি