ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হাসপাতালের বর্জ্য ডাস্টবিনে, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩১ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
হাসপাতালের বর্জ্য ডাস্টবিনে, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য! শতাধিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মেডিকেল বর্জ্য ফেলছে উন্মুক্ত ডাস্টবিনে।

চট্টগ্রাম: নগরের সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মিলে প্রায় শতাধিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মেডিকেল বর্জ্য ফেলছে উন্মুক্ত ডাস্টবিনে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, মেডিকেল হাসপাতালের বর্জ্য স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ এসব বর্জ্য পানি ও বাতাসের মাধ্যমে জীবাণু ছড়াচ্ছে।

এতে মানুষের শরীরে প্রাণঘাতী রোগ বাসা বাঁধার ঝুঁকি বাড়ছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী নগরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে প্রায় ২৭০টি।

এ ছাড়া বিভিন্ন অলি-গলিতে আরও প্রায় শতাধিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।

এর মধ্যে মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহের জন্য একমাত্র অনুমোদিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সেবা সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে মাত্র ১৭০টি। এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যগুলো সেবা সংস্থা সংগ্রহ করে কিছু পুড়িয়ে ফেলে বাকিগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দেয়।

চট্টগ্রাম সেবা সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জমির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে ১৭০টি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, আগ্রাবাদের রোজমেরি ডায়গনস্টিক সেন্টারসহ শতাধিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সেবা সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন খোলা জায়গায় মেডিকেল বর্জ্য ফেলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলছে।

এ ছাড়া বেসরকারি পিপলস হাসপাতাল, শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ কিছু স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হলেও বর্জ্যগুলো সেবা সংস্থার নির্দিষ্ট বিনে না দিয়ে আয়া ও পরিচ্ছন্নকর্মীরা সিটি করপোরেশনের গাড়িতে বা উন্মুক্ত ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে। সেসব বর্জ্য সিটি করপোরেশনের সংগৃহীত গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় মঙ্গলবার (২২ মে) বেসরকারি পিপলস হাসপাতালের এক ঘটনায়। ওইদিন এক প্রবাসীর স্ত্রীর জমজ সন্তান হয়। এর মধ্যে একটি ছেলে ও অপরটি মেয়ে। ছেলেটি ‘মৃত’ ও ‘অর্ধগলিত’ ছিল। হাসপাতালের আয়া স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের গাড়ির জন্য অপেক্ষ‍া না করে তড়িঘড়ি করে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। তখন বিষয়টি স্বীকারও করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শেভরন, ট্রিটমেন্ট, পপুলার হাসপাতালের কয়েকজন দারোয়ান ও পরিচ্ছন্নকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশেষ করে অপারেশন করার পর শরীরের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় অংশ ও সিজারের অংশগুলো ডাস্টবিনে ফেলা হয়। যেকোনো ময়লার গাড়ি আসলে তাড়াতাড়ি সেখানে ফেলে দেওয়া হয়।

সিটি করপোরেশনের একজন পরিচ্ছন্নকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসপাতালের ময়লাগুলো অন্যান্য ময়লার সঙ্গে ডাস্টবিনে ফেলা হচ্ছে।

পিপলস হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আহাদ বাংলানিউজকে বলেন, বর্জ্যগুলো আমাদের এখানে ইনসিনারেটর (পোড়ানো) হয় না। এর জন্য সেবা সংস্থার গাড়িতে দেওয়ার জন্য আয়া ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের বলা আছে। তারপরও মাঝেমধ্যে ভুলে তারা সাধারণ বর্জ্যের গাড়িতে দিয়ে দেন। আমরা এ ব্যাপারে আরও সচেতন হবো।

অভিযোগ আছে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন পাওয়া সেবা সংস্থা বর্জ্যগুলো নিয়ে গেলেও তারা পুড়িয়ে না ফেলে নগরের হালিশহরের টিজিতে (ভাগাড়) ফেলে দিচ্ছে। বর্জ্যগুলোতে রয়েছে সংক্রামক, প্যাথলজিক্যাল, অ্যানাটমিক্যাল, ধারালো, রাসায়নিক, তেজস্ক্রিয় বর্জ্যসহ উচ্চচাপের পাত্রও।

চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শৈবাল দাশ সুমন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত চট্টগ্রাম সেবা সংস্থার উদ্যোগে হাসপাতালের বর্জ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়। যেগুলো পুড়িয়ে ফেলা দরকার সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়, ঝুঁকিমুক্ত বর্জ্যগুলো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। ’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মুজিবুল হক বাংলানিউজকে বলেন, মেডিকেলের বর্জ্য সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। এগুলো মানুষের জন্য সরাসরি ক্ষতিকর। ’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর আইন মানা উচিত। আইন অনুযায়ী বর্জ্যগুলো যাতে ফেলা হয় আমি সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাকে অনুরোধ জানাব। ’

পুলিশি হস্তক্ষেপে নিখোঁজ নবজাতক উদ্ধার

বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
জেইউ/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।