বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে কোনো কোন্দল নেই।
কারণ ব্যাখ্যা করে এ সমাজবিজ্ঞানী বলেন, যে বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রাম ছিল বিদ্যুৎবিহীন। এখন ৮৪ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ৯০ শতাংশ ছেলেমেয়ে স্কুলে যাওয়ার একটা সুযোগ পাচ্ছে। সবাই যে ভালো শিক্ষিত হতে পারছে সেটা আমি বলব না। নারী শিক্ষা গত ১০ বছরে যেভাবে এগিয়েছে তা কল্পনাও করা যেত না। ৩০ বছর আগে আমি একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে। তারা শিক্ষাবঞ্চিত ছিল। এখন অবস্থা একদম পরিবর্তন হয়ে গেছে। এসএসসি-এইচএসসিতে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েরা আগ্রহী হচ্ছে। উপমহাদেশের কোনো দেশ নারী শিক্ষায় এত সাফল্য পায়নি। তার স্বীকৃতি প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছেন।
দেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমে গেছে। শিশুমৃত্যুর হারও কমেছে। যদিও পুষ্টি সমস্যাটা এখনো পুরোপুরি সমাধান হয়নি। আমাদের মধ্যে এখনো দারিদ্র্য কিছুটা রয়েছে। সেই দারিদ্র্যমুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি মনে করি সর্বক্ষেত্রে যেসব জিনিস একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায় তাতে বাংলাদেশ অগ্রগামী।
ড. অনুপম সেন বলেন, খাদ্য সুরক্ষা এবং কৃষিতে অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। একসময় বছরে ২০-৩০ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হতো। এখন সে ধরনের খাদ্যঘাটতি নেই। অনেক সময় নিজেদের ভালো খাওয়ার প্রয়োজনে বেশ কিছু খাদ্য আমদানি করা হচ্ছে। আগে ছিল অভাব। ১৯৭১ সালে ১ কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করতাম। এখন প্রায় ৪ কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করছি। যদিও আমাদের চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে গেছে। তা সত্ত্বেও কৃষি উৎপাদন চার গুণ বৃদ্ধি হয়েছে। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে আমরা বিশ্বে চতুর্থ। সবজি উৎপাদনেও চতুর্থ। আমাদের অনেক অর্জন সারাবিশ্বে বিস্ময়কর। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ভারত, চীন, পাকিস্তানসহ বিশ্বব্যাপী মন্দায়ও বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। শুধু উন্নয়ন নয়, জীবনমানেও অগ্রগতি হয়েছে।
জীবনমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন যিনি রিকশা চালান, যিনি কৃষিকাজ করেন তার কাছে একটা করে মোবাইল আছে। তিনি ইচ্ছে করলে প্রিয়জনের কাছে কথা বলতে পারছেন। এটি জীবনমান উন্নয়ন।
আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছি তখন ঘরে একটি টেলিভিশন ছিল না। রেডিও ছিল। ৭০ এর দশকে অনেক বাসায় রেডিও ছিল। ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ড থেকে আসার সময় প্রথম টেলিভিশন আনি, সাদাকালো। এখন রঙিন টেলিভিশন ঘরে ঘরে। তখন একটি সরকারি চ্যানেল ছিল, এখন কত চ্যানেল। জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটেছে।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনা দরকার উল্লেখ করে এ সমাজবিজ্ঞানী বলেন, সত্যিকারের উন্নয়নের জন্য কমিটমেন্ট উনার (প্রধানমন্ত্রী) আছে। তিনি উন্নয়নের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তার প্রতিটি কথাতে বোঝা যায়। এত নিবেদিতপ্রাণ বাংলাদেশ আগে কখনো পায়নি। উনি নিরন্তর একটি কথা বলছেন, আমার পিতার যে সোনার বাংলার স্বপ্ন সেটি বাস্তবায়ন করতে চাই। তিনি এমন একটি বাংলাদেশ চান যেটি হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শিক্ষাঋদ্ধ, সংস্কৃতিঋদ্ধ এবং মানবিক।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৮
টিসি