সরেজমিন দেখা গেছে, সাতসকালেই গৃহস্থ বাড়ির ‘বউ-ঝি’রা মেলায় আসতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে জমে যায় মেলা।
বাকলিয়া থেকে সপরিবারে কেনাকাটা করতে এসেছেন ফয়জুন নাহার নামের ষাটোর্ধ্ব এক নারী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বয়স হওয়ার পর থেকে প্রতিবছরই বৈশাখী মেলায় এসেছি। তবে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কখনোই আসতে দেননি বাড়ির মুরুব্বিরা। সবসময় মধ্যরাতে বা সাতসকালেই এসেছি। তখন মেলা অনেকটা ফাঁকা থাকে, বখাটেদের ভিড় বা উৎপাত থাকে না।
তিনি বলেন, মেলার শেষদিন হওয়ায় দাম কিছুটা কম মনে হলো। বিক্রেতারা প্রথমে বেশি দাম হাঁকেন, মান বুঝে দরকষাকষি করতে জানলে কম দামে ভালো জিনিসটি কেনা যাচ্ছে। আমি ৩ জোড়া ফুলের ঝাড়ু কিনেছি আড়াইশ’ টাকায়।
বলীখেলার এ মেলায় কী নেই সেটি খুঁজে বের করা কঠিন। সুই থেকে ফুলশয্যার খাট সবই মিলছে হাত বাড়ালেই। মৃৎশিল্প, কারুশিল্প, কুটিরশিল্প থেকে শুরু করে বড় বড় প্লাস্টিক কারখানাসহ অনেক বৃহৎ শিল্পকারখানার পণ্যও দেদারছে বিক্রি হচ্ছে মেলায়। কুমোরের তৈরি টেপা পুতুল, শিশুদের আদি টমটম, প্লাস্টিকের তৈরি ঠেলাগাড়ি, বাঁশি, বেলুন, পোড়ামাটির তৈরি বিশাল বিশাল হাতি-ঘোড়া, ফুলদানি, তৈজসপত্র, শোপিস, ওয়ালম্যাট, মোড়া, বেতের সোফা, কাঠের আসবাবপত্র, দুর্লভ ওষুধিগাছের চারা, মৌসুমি ফলমূল, মুড়ি-মুড়কি, গজা, তিলের খাজা, শাড়ি, লুঙ্গি, মাছ ধরার পলো, টেঁটা, খুন্তি, কোদাল, কাস্তে সবই বিক্রি হচ্ছে মেলায়। সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছেন বিক্রেতারা। ভারী বৃষ্টি বা কালবৈশাখীর ঝামেলা না থাকায় খুশি তারা।
খুশি আগ্রাবাদের এক্সেস রোড এলাকা থেকে আসা নজরুল ইসলামও। তিনি বলেন, মেয়ের জামাই নতুন বাসা নিয়েছে। ভাবলাম জব্বারের বলীখেলা থেকে সংসারের টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনে উপহার দেব। তাই মেলায় আসা।
তিনি ১০ হাজার টাকায় এক ভ্যানগাড়ি গৃহস্থালিসামগ্রী কিনেছেন বলে জানান।
বাঁশখালী থেকে আসা হাতপাখা বিক্রেতা আজিজুল হাকিম বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় দেখছি প্রচুর প্লাস্টিকের ঝাড়ু, মাদুর, হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে। দামও কম। তাহলে আমাদের তালপাতার পাখা, বাঁশ-বেতের নকশি পাখা, শীতলপাটি আর ফুলঝাড়ুর কী হবে। সবকিছু প্লাস্টিকের হয়ে যাচ্ছে।
কুমিল্লার নবীনগর থেকে সস্তা আসবাবপত্র নিয়ে মেলায় আসা আলতাফ মিয়া বাংলানিউজকে জানান, আমরা এতগুলো আসবাব নিয়ে এসেছি। তেমন বিক্রি হয়নি। গাড়িভাড়া, শ্রমিকদের মজুরি, কাঠের দাম সব হিসাব করলে লোকসানে আছি। প্রতিবছরের মতো আরও কয়েকদিন যদি বিক্রির সুযোগ পাই তবে লোকসান কমাতে পারব।
আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বাংলানিউজকে বলেন, বলীখেলায় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য পুলিশ প্রশাসন কঠোর নজরদারি রেখেছে। তিন দিনে মেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এবার বিক্রেতাদের অনুরোধে চার দিন মেলা চলবে। যেহেতু চতুর্থ দিন শুক্রবার, তাই সড়কের ওপর চাপ নেই। এরপর সড়ক থেকে বিক্রেতাদের উঠে যেতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৮
এআর/টিসি