বুধবার (২৫ এপ্রিল) সকাল আটটার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ‘দ্যা সুইজার চিটাগাং’ নামের একটি ২৭ নটিক্যাল মাইল গতির ক্রু বোটে তারা মহেশখালীর মাতারবাড়ী পৌঁছেন। দিনভর রুটিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় তারা ফিরে আসেন।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, বিদেশ থেকে কোনো জাহাজ বাংলাদেশে এলে ইনভেন্ট্রিসহ অত্যাবশ্যকীয় কিছু কাজ কাস্টম হাউসকে করতে হয়। বুধবার (২৫ এপ্রিল) কাস্টমসের রামেজ ডিভিশন, এফ ডিভিশন এবং এআইআর শাখা মাতারবাড়ীতে ‘এক্সিলেন্স’ নামের যে বিশেষায়িত জাহাজটি এসেছে সেটির ইনভেন্ট্রিসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা শুধু ভ্যাট পাব। ডিউটি মওকুপের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এনবিআর সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, জাহাজটি দেশের গ্যাস সংকট নিরসনে ব্যবহৃত হবে ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) বা ভাসমান টার্মিনাল হিসেবে এবং ১৫ বছর পর জাহাজের মালিকানা সরকারের হয়ে যাবে।
‘এক্সিলেন্স’র স্থানীয় এজেন্ট সীকম শিপিং লাইন্স লিমিটেডের পরিচালক জহুর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তা ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জি এবং পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারও এক্সিলেন্স পরিদর্শন করেছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মাতারবাড়ীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে বিদেশ থেকে তরল গ্যাস নিয়ে আসা জাহাজগুলোকে টো এবং সাপোর্ট দিয়ে ভাসমান টার্মিনালের কাছাকাছি নেওয়ার জন্য তিনটি শক্তিশালী টাগসহ পাঁচটি পোর্ট সার্ভিস ভ্যাসেল নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘সুইজার ঢাকা’, ‘সুইজার খুলনা’, ‘সুইজার রংপুর’ হচ্ছে টাগ বোট। ‘সুইজার ফক্সট্রট’ হচ্ছে জ্বালানি, পানিসহ রসদ সরবরাহকারী ভ্যাসেল। প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের আধুনিক ভ্যাসেল পাঁচটি চিটাগং ড্রাইডক এলাকায় রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) ২৭৭ মিটার লম্বা, ৪৪ মিটার প্রস্থ এবং ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশ) ‘এক্সিলেন্স’ জাহাজটি মহেশখালীর মাতারবাড়ীর সমুদ্র উপকূল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নোঙর করেছে। জাহাজে রয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ঘনমিটার এলএনজি।
সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক গ্যাসকে শীতলকরণ (রেফ্রিজারেশন) প্রযুক্তির মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে তরলে (এলএনজি) পরিণত করা হয়। ‘এক্সিলেন্স’ জাহাজটিতে এলএনজিকে সমুদ্রের পানির উষ্ণতা ব্যবহার করে আবার প্রাকৃতিক গ্যাসে রূপান্তর করা হবে। এরপর পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।
এরই মধ্যে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইনের কমিশনিং (গ্যাস ঢুকিয়ে সফল পরীক্ষা) সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন আনোয়ারা থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের আরও ৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে।
যদি সীতাকুণ্ড পর্যন্ত পাইপলাইন তৈরির কাজ শেষ না হয় তবে আপাতত এলএনজি থেকে পাওয়া গ্যাস শুধু চট্টগ্রামে সরবরাহ দেওয়া হবে।
এলএনজি নিয়ে মহেশখালীতে ভিড়ল ‘এক্সিলেন্স’
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৮
এআর/টিসি