ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বন্দর দিবস: সক্ষমতা বাড়ানোই চ্যালেঞ্জ

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৮
বন্দর দিবস: সক্ষমতা বাড়ানোই চ্যালেঞ্জ বে-টার্মিনাল নির্মাণ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেল‍া কঠিন বলছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

চট্টগ্রাম: ১৩১তম বন্দর দিবস। সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার খ্যাত দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি। বন্দর ভবনসহ বন্দরের স্থাপনাগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। ১৪-১৫ হাজার মানুষের মেজবান, অবসরগ্রহণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংবর্ধনাসহ নানা কর্মসূচি থাকছে।    

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম শতাব্দীতেই চট্টগ্রাম বন্দরের নাম ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। হিউয়েন সাং, ইবনে বতুতা, আরব, পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, হার্মাদ আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পদচিহ্নে তিলে তিলে বেড়ে ওঠে এ বন্দর।

ইংরেজরা ১৮৬০ সালে এ বন্দরে দুটি মেকসিফট জেটি তৈরি করে। ১৯৮৭ সালে প্রণীত হয় ‘চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার অ্যাক্ট’।
পরের বছর ২৫ এপ্রিল এ আইনের অধীনে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় এ বন্দরের। ওই দিনটি বন্দর দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে কর্তৃপক্ষ। এবার ১৩১তম বন্দর দিবস।

চা রপ্তানির সুবিধার্থে ১৮৯৯ সালে গঠিত হয় আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে। ১৮৯৯ সালে জেটি নির্মাণের মাধ্যমে শুরু হয় পোর্ট কমিশনার ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের দ্বৈত শাসন। ১৯৬০ সালে গঠিত হয় চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট। এ ট্রাস্টের মাধ্যমে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বন্দরটি পরিচালিত হয়। ওই বছর অধ্যাদেশের মাধ্যমে গঠিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৫ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৯ জন নৌকমান্ডো দুঃসাহসী অভিযান পরিচালনা করে। তারও আগে পাকিস্তানি অস্ত্রবাহী জাহাজ ‘এমভি সোয়াত’ থেকে অস্ত্র খালাসে অস্বীকৃতি জানায় ডক শ্রমিকরা। ২৪ মার্চ ৩ নম্বর জেটির সামনে বিদ্রোহী মিছিলে গুলি চালিয়ে শহীদ করা হয় ২৩ জনকে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে সোভিয়েত সরকার (বর্তমান রাশিয়া) যুদ্ধকালীন মাইন ও ডুবে যাওয়া জাহাজ অপসারণ করে বন্দরকে সচল করে। বর্তমানে এ বন্দর দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ ভাগ পণ্য পরিবাহিত হয়।

স্বাধীনতার পর থেকে শুধু খোলা পণ্য বোঝাই কার্গো জাহাজ আসা-যাওয়া করত বন্দরে। সত্তরের দশকে আমদানি-রপ্তানি পণ্য রোদ, বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা, দ্রুত ও সহজে জাহাজে তোলা-নামা, সড়ক-রেল-নদীপথে পরিবহনের জন্য জনপ্রিয়তা পেতে থাকে কনটেইনার। ২০ ফুট লম্বা ও ৪০ ফুট লম্বা কনটেইনারে প্রায় সব রকমের পণ্য নিরাপদ পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও দূরদর্শিতার সঙ্গে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের উদ্যোগ নেয়। ১৯৭৭ সালে মাত্র ৬টি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে কনটেইনার পোর্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০১৭ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ২০ ফুট লম্বা হিসেবে ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০২টি। ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দর লয়েড’স লিস্টের শীর্ষ শত কনটেইনার পোর্টের তালিকায় ছিল ৯৮তম। নয় বছরের মাথায় ২৭ ধাপ টপকে বর্তমানে উঠে এসেছে ৭১তম স্থানে।

বন্দরের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি, অর্জন ও সফলতার মধ্যেও সক্ষমতা বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিরন্তর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি সংযোজন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), লালদিয়া টার্মিনাল ও নিউমুরিং ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বে-টার্মিনাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক এটি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পভুক্ত হয়েছে। বে টার্মিনালের জন্য প্রস্তাবিত ৯০৭ একর জমির মধ্যে মাত্র ৬৮ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন। বাকি ৮৩৯ একর খাস জমি। ২০১৩ সালে ফিজিবিলিটি স্টাডি মধ্য দিয়ে বে-টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হয়। পরের বছর স্টাডির রিপোর্ট পাওয়া যায়। এরপর জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন। জমি পেলেই ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে নকশা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষে বন্দরের ভেতর থেকে ডেলিভারি পয়েন্ট বে টার্মিনাল এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। তখন বন্দরের কনটেইনার জট, জাহাজ জট, নগরীর যানজট সমস্যার সুন্দর সমাধান হবে।

বিজনেস কমিউনিটি ফ্রেন্ডলি হবে চট্টগ্রাম বন্দর

'ব্যবহারকারী বান্ধব' হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর 

বন্দর দিবসে সাইফ পাওয়ারটেকের মেজবান

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৮
এআর/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।