ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মা’র কোলে সেই শিশু, ফের চমেকে ভর্তি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৮
মা’র কোলে সেই শিশু, ফের চমেকে ভর্তি মা রোকসানা আকতারের কোলে উদ্ধার হওয়া সেই কন্যাশিশুটি। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: নগরের বেসরকারি চাইল্ড কেয়ার হাসপাতাল থেকে মৃত ছেলের বদলে পুলিশি হস্তক্ষেপে উদ্ধার করা কন্যাশিশুটিকে কোলে নিয়েছেন মা রোকসানা আকতার। এ সময় তার মুখে ছিল হাসির রেখা, চোখে টলমল করছিল পানি। 

শনিবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ছয়টায় বেসরকারি রয়েল হাসপাতালের এনআইসিইউ থেকে কোলে করে শিশুটিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল নিয়ে আসেন এ মা। চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে শিশুটিকে পাঠানো হয় ৩২ নম্বর এনআইসিইউ ওয়ার্ডে।

রোকসানা আকতার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি দুটি জিনিস চাই। প্রথমটি হচ্ছে আমার প্রথম বাবুটা যেন বেঁচে থাকেন তার জন্য দোয়া।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা যেন আর কোনো মায়ের সঙ্গে না ঘটে। যদি আমাদের একটি কন্যা শিশুর মরদেহ দিতো তবে কী হতো ভাবতেই পারি না। ’ 

বেসরকারি হাসপাতালের এনআইসিইউতে আরও সপ্তাহখানেক রাখার আর্থিক সামর্থ্য পরিবারটির নেই জানতে পেরে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ প্রতিনিধি আমিনুল হক বাবুর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী শিশুটিকে চমেকে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন।

সিভিল সার্জন বাংলানিউজকে বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে দুই-তিনটি ক্লিনিকে শিশুটির চিকিৎসা করিয়েছে পরিবারটি। মাঝখানে মৃত শিশুটি ফেনীর গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া, ফেরত আনা, পুলিশের হস্তক্ষেপ সব মিলে অনেক মানসিক, আর্থিক ঝড় গেছে তাদের ওপর। আমি বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) শিশুটিকে মানবিক কারণে রয়েল হাসপাতালে দেখতে যাই। তখন চমেকে আনার বিষয়টি আলোচনা করি। কিন্তু শিশুটি নাড়াচাড়ার ধকল সইতে পারবে না চিকিৎসকরা এমন মত দেওয়ায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় জমা দিতে পারেনি। আশাকরি, রোববার (২২ এপ্রিল) প্রতিবেদনটি জমা দেবে।

মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) নগরের প্রবর্তক মোড়ের বেসরকারি ‘চাইল্ড কেয়ার’ হাসপাতালে নবজাতক বদলে অপর এক শিশুর মরদেহ দেওয়ার এ ঘটনা ঘটে। গ্রামের বাড়িতে জানাজার আগে গোসল দেওয়ার সময় দেখা যায় সেটি ছেলের মরদেহ। এরপর ওই মরদেহ সোজা পাঁচলাইশ থানায় এনে জিডি এবং পুলিশ ডিএনএ টেস্ট করার উদ্যোগ নিলে চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ ভোররাতে জানায় বেড বদলের কারণে শিশুটি বদল হয়েছে। কন্যা শিশুটি পাওয়া গেছে। পরদিন সাড়ে ১০টায় শিশুটি হস্তান্তর করা হলে বেসরকারি রয়েল হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি করা হয়। প্রায় ৩৩ হাজার টাকার বিল আসার পর তাকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হলো। বর্তমানে শিশুটির শারীরিক অবস্থারও কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

আমিনুল হক বাবু বাংলানিউজকে বলেন, শিশুর বাবা প্রবাসে থাকলেও আর্থিক অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। বর্তমানে এ শিশুর পেছনে পরিবারটির অযথা লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা পরিবারটির ওপর মানসিক যে ধকল গেছে তা টাকা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়।

‘এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা অপেক্ষা করছি, স্বাস্থ্য দফতরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ পরিবারটির জন্য মানবিক ভূমিকা রাখে কিনা দেখার জন্য। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৮
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।