ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়ে ‘স্বর্গপুরী উৎসব’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়ে ‘স্বর্গপুরী উৎসব’ অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়ে ‘স্বর্গপুরী উৎসব’

চট্টগ্রাম: বিকেলের সূর্য পশ্চিমে হেলে সারি সারি সাজানো বাগানে ফেলেছে আলোর ছটা। এ আবহে কেউ গাইছে আবার কেউ নৃত্যরত। এখানে কোনো দুঃখ কাউকে স্পর্শ করতে পারে না। এই হলো স্বর্গের কল্পিতরূপ। কোনো লোক চাইলেই বহু আকাঙ্খিত এ স্বর্গে পৌঁছাতে পারে না। সংসার চক্রে ঘুরতে ঘুরতে জীবদ্দশার ভালো কর্মের প্রভাবে একপর্যায়ে মানুষ স্বর্গে আরোহণ করতে সক্ষম হয়, আবার পুনঃজন্ম গ্রহণ করে মর্ত্যলোকে ফিরে আসে। এমনিভাবেই ঘুরতে ঘুরতে প্রাণীকুল এক সময় নির্বাণ সুখ লাভ করে। এমন বৌদ্ধিক ধারণা থেকেই কক্সবাজারের রামু উপজেলার উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারে কৃত্রিম স্বর্গ তৈরি করে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালায় ৩৩তম স্বর্গপুরী উৎসব উদযাপন করা হয়।

শুক্রবার (২০ এপ্রিল) দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত রামুর উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারে স্বর্গপুরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সমাজসেবায় একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজন ও রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ উপসংঘরাজ সত্যপ্রিয় মহাথেরোর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো কামাল হোসেন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাজাহান আলি, সহকারি কমিশনার (ভুমি) চাই থোয়াইহলা চৌধুরী, থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ এ কে লিয়াকত আলী, রামু কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল হক, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমদ প্রিন্স।

মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ যেমন এক সাথে বসবাস করে তেমনি উৎসবও প্রায় সকল সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে পালন করে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সরকার সম্প্রীতির উৎসবকে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। এদেশের মানুষ নিজ নিজ ধর্মে নিষ্ঠাবান হওয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে তারা অনুকরণীয় আদর্শ বলে ভাবে। দুনিয়ার সব ধর্মই শান্তির কথা বলে। সব ধর্ম অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কথা বলে। ’

সত্যপ্রিয় মহাথের বলেন, ‘সংসার জীবন প্যাঁচঘরের মতো অত্যন্ত জটিল এবং চক্রময়। এই জটিলতা ও জীবন চক্রকে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে অতিক্রম করে সঠিক লক্ষে পৌঁছাতে হয়। ধৈর্য হারালে চলবে না। আমরা বাংলাদেশি হিসেবে একই অঞ্চলভূক্ত মানুষ। আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সুন্দর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দেখতে চাই। ’

কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বন বিহারের অধ্যক্ষ সারমিত্র মহাথের, রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নীতিশ বড়ুয়া, কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমরবিন্দু বড়ুয়া অমল।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল- প্রভাতফেরি সহকারে বুদ্ধপূজা, ভিক্ষুসংঘের পিন্ডদান, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, অষ্টপরিস্কারসহ মহা-সংঘদান, ধর্মদেশনা, অতিথি ভোজন, দুপুরে স্বর্গপুরী উদ্বোধন, দলীয় নৃত্য, ব্যুহচক্রের স্বর্গপুরী মেলা প্রদক্ষিণ ও আলোচনা সভা, সন্ধ্যায় স্বর্গপুরী উৎসবের প্রবক্তা, বিহারের প্রয়াত অধ্যক্ষ প্রজ্ঞামিত্র মহাথেরোর নির্বাণ সুখ ও দেশ-জাতি এবং বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা, সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৌদ্ধ কীর্তন ও কবির গান।

ধর্মদেশনায় অংশ নেন চকরিয়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শীলানন্দ মহাথের, শীলরত্ন মহাথের, রাঙ্গুনিয়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ দীপংকর থের, বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র ও একশ ফুট সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধমুর্তির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক করুনাশ্রী থের, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের শীলপ্রিয় থের, প্রজ্ঞালোক বৌদ্ধ বিহার ও ধ্যান কেন্দ্রের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাপাল ভিক্ষু প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮

এসবি/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।