বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে জেলেদের জালে ধরা পড়ে মৌসুমের প্রথম ‘নমুনা ডিম’। এরপর মধ্যরাতে জেলেদের বহুল প্রত্যাশিত মা-মাছগুলো ডিম ছাড়তে শুরু করে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর, আশু বড়ুয়া, শ্রীধাম জলদাস জানিয়েছেন রাত দেড়টার দিকে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। এরপর আড়াইটা থেকে তারা ডিম সংগ্রহে নেমে পড়েন। কয়েক বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন তারা।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে রুই জাতীয় মাছের ডিম সংগ্রহের ক্ষেত্রে হালদা বিশ্বে একমাত্র নদী। এ নদীতে বিশাল বিশাল মা-মাছগুলো ডিম ছাড়ে। সেই ডিম নিজস্ব কৌশল, অভিজ্ঞতায় স্থানীয় জেলেরা সংগ্রহ করে এবং মাটির বড় বড় গর্তে পানি দিয়ে ডিম থেকে রেণু উৎপাদন করে। সব ডিম থেকে রেণু হবে না। অনেক ডিম নষ্ট হয়ে যাবে। সেই রেণু ছোট ছোট পুকুরে ছেড়ে দিলে পোনা হয়। প্রতি কেজি রেণুতে চার-পাঁচ লাখ পোনা জন্মাবে। তখন চেনা যায় রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ মাছের পোনাগুলো। এ পোনা সহজে বড় হয় বলে সারা দেশের মৎস্যচাষিদের প্রথম পছন্দ। দামও হ্যাচারির কৃত্রিম পোনার চেয়ে অনেক বেশি।
হালদা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা একটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত মা-মাছ প্রথমে নমুনা ছেড়েছে। নমুনা ডিম ছেড়ে মাছগুলো দেখে আদ্রতা, উষ্ণতাসহ অনুকূল পরিবেশ আছে কিনা। এরপর সাত্তারঘাট এলাকার অংকুরীঘোনা থেকে আজিমের ঘাট পর্যন্ত ১২-১৪ কিলোমিটার এলাকায় ৩০০ নৌকায় প্রায় ৬০০ জেলে ডিম সংগ্রহ করার জন্য অপেক্ষা করেন। রাত আড়াইটা থেকে শুক্রবার (২০ এপ্রিল) সকাল আটটা পর্যন্ত তারা জাল দিয়ে ১৮ কেজি ধারণ ক্ষমতার বালতি, বড় বড় পাতিলে ডিম সংগ্রহ করেন। ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে ডিমের পরিমাণ কমতে থাকে। তারপরও এবার গত পাঁচ বছরের তুলনায় ভালো ডিম পেয়েছেন সংগ্রহকারীরা।
রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মা-মাছ ডিম ছাড়ার পর দুর্বল হয়ে যায়। এ সময় যাতে কেউ মাছ শিকার করতে না পারে সে লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
এআর/টিসি