মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) নগরের গোলপাহাড়ের বেসরকারি চাইল্ড কেয়ার ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন পাঁচ দিনের মৃত ছেলে গছিয়ে দেওয়া হয়েছিল রোকসানা আক্তারকে (২১)। নবজাতক বদলে মৃত শিশু দেওয়ার অভিযোগ!
ওই শিশুর মৃতদেহ জানাজার আগে গোসলের সময় খুলে দেখেন ছেলে।
রোকসানা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ওই শিশুর মরদেহ নিয়ে আমরা সারারাত অ্যাম্বুল্যান্সে বসেছিলাম থানার সামনে। ভোররাতে আমাকে জানানো হয় আমার মেয়ে পাওয়া গেছে। আইসিইউতে পাশের সিটের শিশুর সঙ্গে বদল হয়েছে। সকালে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে এসে ছেলের মরদেহ নিয়ে যায়, পরে আমার মেয়েকে ফেরত দেয় চাইল্ড কেয়ার থেকে।
বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বর্তমানে শিশুটি বেসরকারি রয়েল হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
রোকসানা বলেন, চাইল্ড কেয়ার নাম দিলেও সেটি টাকা বানানোর মেশিন ছাড়া কিছু নয়। আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা যেন আর কোনো মায়ের সঙ্গে না হয়। ওদের আইসিইউতে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। তারা হয়তো আমার বুকের ধনকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। যদি আমাকে অন্য কোনো কন্যার মরদেহ দেওয়া হতো আমি বুঝতেই পারতাম না। এ ধরনের ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া উচিত সরকারের। আমি এ ঘটনায় জড়িত ডাক্তারসহ চাইল্ড কেয়ারের সবার শাস্তি চাই।
তিনি বলেন, চাইল্ড কেয়ারে ভর্তি করানোর পর শেভরন ও ট্রিটমেন্টে পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে উল্লেখ আছে মেয়ে। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে লেখা আছে মেয়ে। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেটে শুধু ছেলে লেখা ছিল। যখন বাবুর মরদেহ প্যাকেট করে দেওয়া হয় তখন তারা বলেছিল, মা যেন বাবুর চেহারা না দেখে। বাবুর মুখে রক্ত লেগে আছে। তা দেখলে হার্ট অ্যাটাক করতে পারে।
নবজাতক নিয়ে ন্যক্কারজনক এ ঘটনা শুনে রয়েল হাসপাতালে ছুটে আসেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ প্রতিনিধি আমিনুল হক বাবু। তিনি গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছে চাইল্ড কেয়ার কর্তৃপক্ষ। কেয়ার লেস কাজ করেছে তারা। এর সঙ্গে সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত থাকতে পারে। সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
রয়েল হাসপাতালের আইসিইউতে নবজাতককে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ডা. বিধান রায় চৌধুরী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শিশুটির বেশ অসুস্থ। জন্মের পর ব্রেনে অক্সিজেন পৌঁছেনি। খিঁচুনি ও ইনফেকশন আছে। আমরা মেডিকেল বোর্ড গঠন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
মঙ্গলবার রাতে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফাহিম হাসান রেজা বলেছিলেন, ওই মা ছেলে সন্তানই জন্ম দিয়েছিলেন। রেজিস্ট্রার ও ডেথ সার্টিফিকেটে ছেলে লেখা আছে। প্রতিটি শিশুর শরীরে ট্যাগ লাগানো থাকে। তাই ভুল হওয়ার সুযোগ নেই।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে সাধারণ ডায়েরি নিয়ে বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছিলাম আমরা। আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা শিশুটির ডিএনএ টেস্ট করে মামলা নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও ওই মাকে জানিয়েছিলাম। ভাগ্য ভালো মেয়েটিকে তার মায়ের কোলে জীবিত ফিরিয়ে দিতে পেরেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
এআর/টিসি