ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে যত চেষ্টা

সুবল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে যত চেষ্টা গতবছর নগরে জলাবদ্ধতা। ছবি:বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: দুয়ারে কড়া নাড়ছে বর্ষা। বর্ষ‍ায় নগরের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এবার ভারী বৃষ্টিপাত হলে নগরে জলাবদ্ধতা কিরূপ প্রভাব পড়তে পারে; নাকি নিচু এলাকা হাটু থেকে কোমর পানিতে আবারো প্লাবিত হবে এরূপ আশংকা নগরবাসীর মধ্যে রয়েছে।

তবে আশার কথা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নেওয়া ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পের কাজ শিগগিরই শুরু করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে ৫০০ কোটি টাকাও বরাদ্দ দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নিয়ে শংকা দূর হয়েছে। শিগগিরই সেনাবাহিনী এ মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরে আর জলাবদ্ধতা হবে না। ’ 

গতবছর নগরে জলাবদ্ধতা।  ছবি:বাংলানিউজ

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘বর্ষাকাল চলে এসেছে। বর্ষাকালে বৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এবছর থেকে তো পুরোপুরি সুফল আশা করা যাবে না। প্রকল্পের অধীনে এ বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত হলে অন্তত নগরের যেসব নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, সেইসব এলাকায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু এলাকাও চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে চাকতাই, বকশিরহাট, দেওয়ানবাজার, খাতুনগঞ্জ, বৃহত্তর বাকলিয়া, চকবাজার, হালিশহর, আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক এলাকা ও চান্দগাঁওয়ের কিছু অংশ উল্লেখযোগ্য। এসব এলাকায় পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম দফায় নালা ও খাল পরিস্কার করা হবে। ’

‘বর্ষার কারণে মেগা প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে না। স্থায়ীভাবে সুফল পেতে হলে নগরবাসীকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে এবং সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। ’ যোগ করেন আবদুচ ছালাম।

চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের সমঝোতা (এমওইউ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে নগরবাসীকেও সহযোগিতা করতে হবে। সিটি করপোরেশনে যেসব জনবল আছে, সবাইকে নিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে আমি সহযোগিতা করবো। আমাদের সকল কাউন্সিলর, প্রকৌশল বিভাগ আছে, সকলেই সহযোগিতা করবেন। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর থেকে এ বিষয়ে আমার সাথে কথা হয়েছে। আমাদের চসিকের পক্ষ থেকে শতভাগ সহযোগিতা করা হবে। ’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুর আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্ষা তো চলে এসেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন রুটিন অনুযায়ী কাজ করছে। এরপরেও ভারী বৃষ্টিপাত হলে নগরবাসী সাময়িক কষ্ট পেতে হবে। এইটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আরও কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। ’

তবে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় যে মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেটির মাধ্যমে নগরবাসী স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এদিকে, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৫ দিনের বিশেষ ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নালা থেকে মাটি ও আবর্জনা উত্তোলন এবং মশার ডিম ধ্বংসকারী ‘লার্ভিসাইড’ স্প্রে করে বিশেষ এ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়। আগামী ৫ মে পর্যন্ত নগরের ৪১ ওয়ার্ডে এ ক্রাশ পোগ্রাম চলবে।

গতবছর নগরে জলাবদ্ধতা।  ছবি:বাংলানিউজ

ক্রাশ প্রোগ্রামের অধীনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০০ পরিচ্ছন্ন কর্মী নালা পরিস্কার এবং লার্ভিসাইড স্প্রে ছিটানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিদিন ৫টি ওয়ার্ডে এ অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে চসিকের ২০, ২১, ৩২, ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ড, ৭, ৮, ১৫, ২৪ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানো হয়েছে। ১৭-১৯ এপ্রিল ১৭, ১৯, ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে, ২০-২৩ এপ্রিল ৪, ১৪, ১৬, ২৬ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে, ২৪-২৬ এপ্রিল ১০, ১১, ১৩, ২২ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে, ২৭-২৯ এপ্রিল ৯, ২৩, ২৫, ২৭ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে, ৩০ এপ্রিল থেকে ২ মে ৩, ৫, ৬, ১২ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে এবং ৩-৫ মে ১, ২, ১৮, ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালিত হবে।

চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বাংলানিউজকে বলেন, ‘চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডে মাসব্যাপী বিশেষ ক্রাশ পোগ্রাম চলছে। প্রত্যেক এলাকার নালা থেকে মার্টি ও বর্জ্য পরিস্কার করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা রোধে খাল খননসহ অন্যান্য কাজের জন্য সিটি করপোরেশনে বরাদ্দ নেই। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের দায়িত্ব এখন সিডিএর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া এ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন প্রত্যেক কাউন্সিলরকে সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে যেকোন সহযোগিতা করার জন্য আমরা প্রস্তুতি রয়েছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮

এসবি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।