সুকান্তের বাবা সুরেশ চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে জানান, ভর্তির পাঁচ দিনের মাথায় একাডেমির আগের ব্যাচের বড় ভাইদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে (বুলিং) অসুস্থ হয়ে পড়ে সুকান্ত। একাডেমির শিক্ষকদের অগোচরে চড়, থাপড়, কিল, লাথি থেকে শুরু করে পায়ের নিচ দিয়ে হাত ঘুরিয়ে কান ধরিয়ে ‘মুরগি’ বানানো হয়েছে তাকে।
ছেলের এমন দুরবস্থায় হতাশ কণ্ঠে এ বাবা বলেন, বুক ভরা আশা নিয়ে ঢাকা থেকে অনেক দৌড়ঝাঁপ করে দুই লাখ টাকা খরচ করে ছেলেকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণপাড়ের মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে ভর্তি করেছিলাম। এখন ছেলের মুখে যা শুনলাম তাতে গা শিউরে উঠছে। হাসপাতালের বিছানায় সে ঘুমের মধ্যেও কঁকিয়ে উঠছে।
ছেলের উদ্ধৃতি দিয়ে এ বাবা বলেন, বিকেল চারটার পর থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত মেরিন একাডেমির কর্তৃত্ব বলতে গেলে সিনিয়র স্টুডেন্টদের হাতেই থাকে। এ সময় নানা ভাবে নতুন শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়। অভিভাবক আর শিক্ষকদের কাছে নালিশ দুটোই ‘নিষিদ্ধ’ এখানে। ইয়েস, নো, থ্যাংক ইউ এ রকম কয়েকটি শব্দের বাইরে কথা বলা নিষেধ। জুনিয়ররা জিরো, সিনিয়ররা হিরো। হিরো ডাকলে যদি জুনিয়ররা সাড়া দেয় তবে তাকে ‘মুরগি’ বানানো হয়।
ছেলে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলেছে, তার স্বপ্ন শেষ। সে আর মেরিন ফিশারিজ একাডেমিতে ফিরে যাবে না। তার আশঙ্কা সেখানে গেলে তাকে হয়তো একেবারে শেষ করে দেওয়া হবে।
ঢাকার মহাখালীর বাসিন্দা সুকান্ত ২০১৫ সালে বিএফ শাহীন স্কুল থেকে এসএসসি ও মোহাম্মদপুরের সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে ২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করেন।
সুকান্তের বাবার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেরিন ফিশারিজ একাডেমির অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন মাসুক হাসান আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, হয়তো সিনিয়র স্টুডেন্টরা নিয়ম-কানুন শেখানোর সময় সুকান্ত ভয় পেয়ে গেছে। আমি নিজে তাকে হাসপাতালে দেখতে গেছি, তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন দেখিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটি ভুল বোঝাবুঝি। তারপরও বিষয়টি আমি নিজে খতিয়ে দেখছি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য হয়তো অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। এখানে নারী শিক্ষার্থীরা আছেন। এখানে অনার্স কোর্স চালু হচ্ছে। যারা পাস করে বেরিয়েছে তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সনদ বা সিডিসি (কনটিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট) হয়ে গেছে। চীনে কর্মসংস্থানের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
এআর/টিসি