যেসব দোকানে চলছে হালখাতা নিয়ে মিলাদ বা পূজা, সেসব দোকানে বাদক দল হাজির। ডিজিটাল যুগে এসে অধিকাংশ দোকানিরই নেই ঐতিহ্যময় হালখাতা নিয়ে মাতামাতি বা কীভাবে তা রক্ষা করবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা।
বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী রোববার (১৫ এপ্রিল) ১৪২৫ বাংলা সনের প্রথম দিন। অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ।
সম্রাট আকবর হিসাবের সুবিধার্থে দিনক্ষণ ঠিক রাখতে চালু করেছিলেন বাংলা সন। আজ ১৪২৫ বাংলা সনে এসে বাংলা সনের বিদায় আর বরণ উৎসবের ব্যাপকতা বাড়লেও খ্রিষ্টাব্দের (ইংরেজি) তারিখের ব্যাপক প্রচলন এবং সেই তারিখ অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা, ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা, হিসাবপত্র কম্পিউটারের ডিজিটাইলেশন হওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে হালখাতার কার্যক্রম।
চাক্তাইয়ের মরিচ হলুদের পাইকারি দোকান চরফ্যাশন বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ৩১ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি। এখন হিসাবের দুইটা খাতা লিখতে হয়। যেহেতু ব্যাংকগুলো ইংরেজি তারিখে হিসাব করে তাই ব্যাংকের জন্য একটি খাতা এবং আমাদের পণ্য সরবরাহকারী ও ক্রেতারা বাংলা মাস অনুযায়ী হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করে তাই তাদের জন্য বাংলা তারিখে হিসাব লিখে রাখতে হয়। এবার বাংলা তারিখে ১৪২৪ বাংলা বছর শেষ হয়েছে শুক্রবার। ওই দিন জুমাবার হওয়ায় দোকানে মিলাদ পড়িয়ে পরদিনের কার্যক্রম একদিন আগে শুরু করেছে এখানকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বড় ব্যবসায়ীরা কম্পিউটারে হিসাব রাখলেও তারপরও তাদের হিসাব সাধারণ খাতায় লিপিবদ্ধ করতে হয়। সেই দিক বিবেচনা করলে এখনো হালখাতার রেওয়াজ রয়ে গেছে এবং থাকবে। সাধারণ দোকানিরা এখনো খাতায় হাতে লেখা নীতি অনুসরণ করে হিসাব করে আসছেন। জানালেন মেসার্স শ্রীকৃষ্ণ এজেন্সির মালিক দেবাশীষ দাশগুপ্ত।
খাতুনগঞ্জের চিঁড়া, মরিচ, হলুদ, চিনি ও তেলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জগদ্ধাত্রী ভাণ্ডারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কানু বিকাশ মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, আগে আমরা সারা বছর বেচাকেনা করে লেনদেন শেষ করতাম বছরের শেষদিনে। ওই দিন ক্রেতারাও পাওনা টাকা থেকে কিছু টাকা কম দিয়ে খুশি হতেন এবং আমরাও একই ভাবে আমাদের পণ্য সরবরাহকারীকে বছরের শেষদিনে কিছু কম দিয়ে হিসাব শেষ করতাম। ফলে সব পক্ষই মিষ্টিমুখে খুশি হয়ে শেষ করতাম বাৎসরিক লেনদেন।
তিনি বলেন, আধুনিক ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে ইংরেজি তারিখে ব্যাংক এবং ব্যাংকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে আমাদেরও কিছুটা ইংরেজি তারিখে হিসাব করতে হচ্ছে। একই খাতায় রাখতে হচ্ছে বাংলা ও ইংরেজি দুই ধরনের তারিখ। তবে দেশের অন্যতম পাইকারি এ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে আমরা এখনো ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হয়তো পরবর্তী প্রজন্ম ভুলেও যেতে পারে হালখাতা লেখা বা উৎসবের কথা।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৮
ইউকেডি/টিসি