ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রাজনৈতিক অমনোযোগে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৮
রাজনৈতিক অমনোযোগে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম রাজনৈতিক অমনযোগে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম: বাণিজ্য নগরী বা বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও চট্টগ্রামে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ায় পিছিয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড.হোসেন জিল্লুর রহমান।

তিনি বলেন, দেশের যে বন্দর দিয়ে ৯২ শতাংশ আমদানি-রপতানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয় সেই চট্টগ্রাম বন্দরে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। এতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি পিছিয়ে পড়েছে।

এজন্য রাজনৈতিক অমনোযোগকে দায়ী করে তিনি বলেন, দেশ যখন স্বাধীন হচ্ছে তখনও ঢাকা-চট্টগ্রামের অবস্থান ছিল এক এবং দুই। এখনও তাই আছে।

কিন্তু এক এবং দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান বেড়েছে বহুগুণ।

শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন ড.হোসেন জিল্লুর রহমান। ‘সংকটে বন্দর উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিপার্স কাউন্সিল।

দেশে বিনিয়োগ বাড়লেও এর সুফল মিলছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনিয়োগ বলতে টাকা এবং কংক্রিটকে বোঝানো হচ্ছে। এখানে সবার নজর। ফলে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন করা হয়েছে। কিন্তু যাত্রার সময় কমেনি, যানজটও কমেনি। আরও বেড়েছে।

তিনি বলেন, একটি উন্নত পোর্টের আলোচনা করলেই হবে না। একই সাথে নগরীর আলোচনাও করতে হবে। পোর্টের সঙ্গে সঙ্গে যদি নগরী গড়ে না ওঠে তবে এর সুফল পাওয়া যাবে না। কারণ কোন একটি সংস্থার প্রধান কার্যালয় এখানে হলে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বসবাসের সব সুযোগ সুবিধা এখানে থাকতে হবে। না হলে এখানে তারা আসবে না। সে কারণেই সিঙ্গাপুর কেবল বিশ্বের সেরা বন্দর নয়, সেরা নগরীও।

‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অমনযোগের একটা বাস্তবতা দেখতে পাচ্ছি। ফলে কেবল চট্টগ্রাম বন্দর নয়, চট্টগ্রাম সিটিও পিছিয়ে পড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর বনাম পায়রা বন্দর এভাবে দেখার কোন অবকাশ নেই। চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়া অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। দেশে আরও অনেক বন্দর হতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। কারণ নতুন বন্দর হতে সময় লাগবে। ’ 

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন। প্রাকৃতিকভাবে এর অবস্থান চট্টগ্রামে হলেও সুফল পাচ্ছে সারাদেশের মানুষ। তাই বন্দরের অগ্রগতি মানে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতি।

চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনীতি নিয়ে নানা সমালোচনা আছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবেই নিতে হয়।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড.খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‍সড়ক, সেতু ও রেল খাতের উন্নয়নে সরকার গুরুত্ব দিলেও বন্দরের দিকে নজর ছিল না। হয়তো সরকারের প্রাধিকার থাকতে পারে। কিন্তু এখন বন্দরের উন্নয়নে প্রাধিকার দেওয়া উচিত।

সেমিনারে বন্দর ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন বন্দর-কাস্টমসের বিভিন্ন সমস্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, এই ধরনের সেমিনারে উচ্চ পর্যায়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ী দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন। তার মানে হলো সেবা দানকারী সংস্থার সাথে দূরত্ব বেড়েছে। এটি ভাল লক্ষণ নয়।

পরিকল্পনায় সমন্বয় থাকার দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন না করে অন্য বন্দর নিয়ে ভাবা উপযুক্ত চিন্তা নয়। সকল বন্দর উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সবার আগে চট্টগ্রাম বন্দর।

সেমিনারে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের নানা ভোগান্তি, বন্দরের অবকাঠানো উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি মোকাবেলায় সক্ষমতা না বাড়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।  

ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের হেড অব নিউজ মামুন আবদু্ল্লার সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে শিপার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী মিজান, বিজিএমইএ পরিচালক অঞ্চন শেখর দাশ, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি সৈয়দ মো.বখতিয়ার, চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী, বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো.জাফর আলম, চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ড.নাহিদা ফরিদী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৮

এমইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।