আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, পটিয়া স্কুলের ১১ একর জায়গা থেকে দানকৃত আড়াই একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত সেই পটিয়া কলেজও ইতোমধ্যে জাতীয়করণ হয়েছে। যেটি অত্যন্ত আনন্দের হলেও উপেক্ষিত ও অবহেলিত থেকে গেলো সেই প্রাচীন ও ঐতিহ্যমণ্ডিত বিদ্যাপীঠ পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়।
পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘১৮৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত পটিয়া স্কুল সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ। এই স্কুলের বর্তমানে ৭৯৫ শতক জায়গা রয়েছে।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুধবার পটিয়া স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভা থেকে ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলকে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে স্কুলের শিক্ষকমণ্ডলী, ১৩ শতাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের প্রাণের দাবি পূরণ করবেন। সেই অপেক্ষায় রয়েছি। ’ যোগ করেন প্রধান শিক্ষক।
স্কুল সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে জেএমসেন হলের প্রতিষ্ঠাতা যাত্রামোহন সেন (শিক্ষাবর্ষ-১৮৬৫), কবি গুণাকর উপাধিপ্রাপ্ত রায় বাহাদুর নবীন চন্দ্র দাশ (১৮৬৬), এ বিদ্যালয় হতে সর্বপ্রথম এন্ট্রান্স পাশ ও পরে সাবজজ ঊমাচরণ চক্রবর্ত্তী (১৮৬৭), বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা মহিম চন্দ্র দাশ (১৮৯০), প্রাচীন পুঁথি সংগ্রাহক ও গবেষক মুন্সি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ (১৮৯৩), অবিভক্ত বাংলার খাদ্যমন্ত্রী খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমেদ (১৯০৪), বিশিষ্ট গণিতজ্ঞ করুণাময় খাস্তগীর (১৯০৫), আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গণিতবিদ ড. আতাউল হাকিম (১৯০৭), চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক ইংরেজির অধ্যাপক ও সাহিত্যিক যোগেশ চন্দ্র সিংহ (১৯০৯), শিক্ষাবিদ, ইসলামী গবেষক ও কোরআনের ভাষ্যকার আবদুর রহমান (১৯১৪), বহু গ্রন্থের প্রণেতা, মধ্যযুগের সাহিত্য গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আহমদ শরীফ (১৯৩৮), সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু (১৯৫৯), কৃষিবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সিরাজুল করিম (১৯৬০), মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের সাবেক চেয়্যারম্যান অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী (১৯৬৮), পদার্থবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম (১৯৬৯),বিটিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদির’জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত (১৯৭২), এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলম মাসুদ (১৯৭৫), বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরশনের চেয়ারম্যান ড. অপরূপ চৌধুরী (১৯৭৫), মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এম জামাল উদ্দিন আহমেদ (১৯৭৫), অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ ইউছুপ (১৯৭৫), বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আলমগীর (১৯৭৯), হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান (১৯৮২) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আবদুল হাফেজ জানান, দুর্গা কিঙ্কর দত্তের প্রতিষ্ঠিত পটিয়া স্কুলে মানসম্পন্ন লেখাপড়ার সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষায় এ স্কুল থেকে অর্ধশত ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়ে ও ভাল ফলাফলের মাধ্যমে স্কুলের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে চলেছে। ২০১৭ সালে পটিয়া উপজেলায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে স্কুলটি এবং ২০১৬ সালে জেএসসিতে ৩৩ জন ছাত্র মেধাবৃত্তি পেয়েছে। এরমধ্যে এ স্কুলের ছাত্ররা প্রথম ১১ জন ট্যালেন্টফুলে বৃত্তি পাওয়ারও গৌরব অর্জন করে। ১৭৩ বছরের পুরনো এ স্কুল থেকে অসংখ্য গুণীছাত্র বেরিয়েছেন। যারা বর্তমানে দেশ-বিদেশি সমাদৃত। ১৯৯৬ সালে এ স্কুলের মাঠেই জনসভায় এসেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের সকলেরই প্রাণের দাবি পটিয়া স্কুলকে জাতীয়করণ করা হোক। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
স্কুলের প্রাক্তণ ছাত্র ও গণমাধ্যমকর্মী আহমদ উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামে যেসব স্কুল রয়েছে, এরমধ্যে শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে পটিয়া স্কুল সবার শীর্ষে। পৌরসদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ স্কুলে ৭৯৫ শতক জায়গা রয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত ভবনও। পটিয়ার মানুষের প্রাণের দাবি এ স্কুলকে জাতীয়করণ করা হোক। বুধবার বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ স্কুলের মাঠেই জনসভায় ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ এ জনসভা থেকেই পটিয়া স্কুলকে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে আমাদের প্রাণের দাবি পূরণ করা হোক। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৮
এসবি/টিসি