চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে রোববার (১৮ মার্চ) বিকেলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ইস্যু নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে দুর্য়োগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়।
ভিডিও কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
দুর্য়োগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে রয়েছে, সেখান থেকে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিয়ে গিয়ে ভাসানচরে পুনর্বাসন করা হবে।
এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১২০টি ক্লাস্টারে ১২০টি শেল্টার হাউজসহ ১৪৪০টি বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ভাসানচরে প্রায় ১৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ২১ কিলোমিটার প্রটেকশন কার্যক্রম, দ্বীপটির নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি হাউজ, প্রশাসনিক ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনার নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
ইতোমধ্যে ১৪৪০টি বাড়ির নির্মাণের জন্য নির্ধারিত ৩০টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়ির ফ্লোরের উচ্চতা ভূমি হতে ৪ ফুট উচু। এতে ৪ ফুট উচ্চতার যেকোন জোয়ার হতে বাড়িতে অবস্থানরত জনবল সুরক্ষিত থাকবে।
এছাড়াও ভাসানচরে ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রের গ্রাউন্ডফ্লোর ভূমি হতে ৪ ফুট উচু এবং গ্রাউন্ড ফ্লোর হতে প্রথমতলা ১০ ফুট উচু। এরফলে দ্বীপটির আশ্রয়কেন্দ্রের প্রথমতলায় অবস্থানরত জনবল ১৪ ফুট উচু জলোচ্ছ্বাসকে মোকাবেলা করতে পারবে।
পাশাপাশি দ্বীপটির জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলায় চলমান অর্থবছরে ৩ মিটার উচ্চতা ও ৩৭ মিটার প্রস্থের বাঁধ লেয়ার বাই লেয়ার পদ্ধতিতে নির্মাণ কাজ চলছে। যা আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই নির্মাণ করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে প্রায় ১৩ কিলোমিটার বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
ভিডিও কনফারেন্সে উখিয়ার ক্যাম্পগুলো থেকে এক লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তার জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, ‘আসন্ন বর্ষা মৌসুমে অতি বৃষ্টি হলে উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পে সমস্যা দেখা দেবে। যেহেতু এসব পাহাড়ী এলাকা। যারা খুব বেশি ঝুঁকিতে আছে, তাদের স্থানান্তর করা প্রয়োজন। ’
ক্যাম্পে যেকোন ধরনের সমস্যা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রস্তুত থাকার কথাও জানান বিভাগীয় কমিশনার।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরও জনবলের প্রয়োজন রয়েছে। ’
এসময় প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, ‘আসন্ন বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জীববৈচিত্র্যের যাতে কোন ক্ষতি না হয়, সেই বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে। শরণার্থী ক্যাম্পের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রয়োজনে আরও জনবল নিয়োগ দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে।
ভাসানচরে পুনর্বাসন কার্যক্রমের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে কমিটি গঠনে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৮
এসবি/টিসি