ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সিডিএর অনিয়মের চিত্র তুলে ধরলেন গণপূর্তমন্ত্রী

সুবল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৮
সিডিএর অনিয়মের চিত্র তুলে ধরলেন গণপূর্তমন্ত্রী বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) অনেক ক্ষেত্রে অনিয়ম করছে উল্লেখ করে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘সিডিএর তদারকি নেই বলেই নগরীতে অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। নগরীতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবারে কাজ শুরু করে শনিবার বিকেলে শেষ করে।’

রোববার (১১ মার্চ) সকালে সিডিএর সম্মেলন কক্ষে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মনিটরিং কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নগরীতে অনেক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে জানিয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, সিডিএর অনুমতি ছাড়াই এসব স্থাপনা নির্মিত হয়েছে।

সিডিএর অনুমতি না নিয়ে ভবন নির্মাণ করা হলে, তা তো উচ্ছেদ করা দরকার। ফুটপাত থেকে ৫ ফুট দূরে স্থাপনা নির্মাণের নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু কেউ এসব নির্দেশনা মানছে না। শুধু চট্টগ্রামে নয়, ঢাকা, খুলনাসহ অনেক স্থানে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করছে। চট্টগ্রামের অনেক স্থানে পাহাড় কাটছে। পাহাড়কাটার এসব বালু গিয়ে খালে পড়ছে। খাল ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব পাহাড়কাটা বন্ধ করতে হবে। সিডিএর ইন্সপক্টেররা এসব কাজে বাধা দেয় না কেন?

পাহাড়কাটার কারণে অনেক প্রাণহানি ঘটছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘পাহাড়ে কেন বসতি গড়বে।   তাদের উচ্ছেদ করতে হবে। চট্টগ্রামে অনেক জায়গা আছে। প্রয়োজনে গণর্পূত মন্ত্রণালয় থেকে জায়গা দেব।

চট্টগ্রামে যাতে আর কোনো পাহাড় কাটা না হয়, সেই বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেন গণপূর্তমন্ত্রী।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, সিডিএর অনুমতি ছাড়া যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে অবশ্যই নির্মাণ আইন মানার নির্দেশনাও দেন তিনি।

সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। পাহাড় কাটা বন্ধে তারা দায়িত্ব পালন করছে। বিশেষ ক্ষেত্রে পাহাড় কাটার প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনুমতি অবশ্যই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে সিডিএ নির্মাণ আইনের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করছে।

আগামী দুই বছরের মধ্যে নগরবাসীকে সিডিএর মাস্টারপ্ল্যান উপহার দেওয়ার কথাও জানান সিডিএ চেয়ারম্যান।

সভায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউল মজিদ বলেন, প্রকল্প অনুযায়ী আইনের মধ্যে থেকে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর দায়িত্ব পালন করবে। প্রকল্পের সুফল পেতে হলে সমাধান বের করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলে প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে।

খাল খননে চসিকের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সহযোগিতা ও জনগণকে সচেতন করার পরামর্শের কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রকল্পে সিডিএর জরিপের সঙ্গে চসিকের জরিপের কিছু ভিন্নতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে দুই প্রতিষ্ঠান বসে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। গরিবউল্লাহ শাহ মাজার এলাকার পাহাড়সহ নগরীর বেশ কিছু স্থানে পাহাড় কেটে ন্যাড়া করা হচ্ছে। সেই পাহাড়ের বালু এসে খাল ভরাট হচ্ছে। পাহাড় কাটার এসব বালু এসে যাতে খালে না পড়ে, সেসব স্থান চিহ্নিত করতে হবে।

এ সময় জাদুর ঘাস খ্যাত থাইল্যান্ডের বিন্না ঘাসের মাধ্যমে খালে বালু ঠেকানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ওয়াসার মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করার পরামর্শ দেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ। তিনি বলেন, নগরীর খালগুলোর খননকাজে কী কী করতে হবে, ওয়াসার মাস্টারপ্ল্যানে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, সরকার ইতিমধ্যে নদী খননে বন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। শিগগিরই সদরঘাট থেকে বাকলিয়া পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে আলাদাভাবে আরও ২৩টি স্লুইসগেইট নির্মাণের কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী একেএম সামশুল করিম।

সভায় চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ উল হাসান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন, চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান প্রমুখ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নে মতামত দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৮

এসবি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।