বিশাল এ ভূমির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করছে খোদ বিডিবির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সেখানে ২০ জন সশস্ত্র আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছে।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দুল মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুত বিভাগের মালিকানাধীন জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।
সরকারি ভূমিটির নিরাপত্তায় ২০ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে মাটি কেটে নিতে পারতো না। তাদের তদারকির অভাব রয়েছে।
প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, কর্ণফুলী থানায় সাধারণ ডায়েরির পাশাপাশি আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
মাটি চুরির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি কয়েকদিন আগে জানতে পারি। এরপর খোঁজ নিয়ে সত্যতা পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি বলেন, খভর নিয়ে জানতে জানতে পারি এসব মাটি কেটে নিয়ে চক্রটি কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের কাজে বিক্রি করছে। টানেল প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও অবৈধভাবে নেওয়া মাটি সরবরাহ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে মাটি কেটে নিতে না পারে সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আনসারদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়ে তিনি একমত পোষণ করে বাংলানিউজকে বলেন, অস্ত্রধারী আনসার বলে তাদের ৫ শতাংশ বেশি বেতন দেওয়া হয়। তারা নাকি মাটি কেটে নিতে দেখেনি। এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাই আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
জিডিতে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আনসার সদস্যরা কারও নাম বলতে পারছে না। তাই নাম উল্লেখ ছাড়াই সরকারি জমি থেকে মাটি নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ দায়ের করা হয়। আনসার কমান্ডেন্ট জাহাঙ্গীর বাদি হয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন।
জমি নিয়ে মামলার কারণে নিরাপত্তা বেস্টনি, ওয়াচ টাওয়ার, ব্যারাক নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, মাটি চুরির বিষয়টিকে আমি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। খুব দ্রুত দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ২০০৯-১০ সালে জেলার আনোয়ারার চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল) এলাকার পাশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের ঘোষণা দিয়ে বিশাল এ জমি ক্রয় করে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাবসায়িক গ্রুপ বসুন্ধরা। কয়েক শত কোটি টাকা ব্যয় করে মাটি ভরাট ও বেড়ি বাঁধ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১১ সালের জুনে আকস্মিকভাবে ওই জমিতে সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলে জমি দখলে নেয় পিডিবি।
তখন কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে অবগত হয়ে স্থানীয় লোকজন আন্দোলন শুরু করে। স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে সরকার তখন সেখানে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে। বর্তমানে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে প্রকল্পটির কাজ চলছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বসুন্ধরা গ্রুপ যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল সেটি বাস্তবায়ন হলে আনোয়ারাসহ চট্টগ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতো। উপশহর হতো এই অঞ্চলটি। পরবর্তী সময়ে পিডিবি ওই জমি দখলে নিলেও এখনো কোন উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারেনি।
জায়গাটির পাশ দিয়ে এলএনজি পাইপ যাওয়ায় আগামীতে সেখানে এক হাজার মেগাওয়াটের তাপ বিদ্যুৎন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মো. শামসুদ্দীন। তবে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী একটি চক্র মাটি চুরি করে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে বিক্রি করছে। এ প্রকল্পের ঠিকাদারদের মধ্যে একজন মো. আনোয়ার। তার গাড়িতে করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে মাটি চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৮
এমইউ/টিসি