ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ধুলো উড়িয়ে ছোটাছুটি আফ্রিকান জেব্রাগুলোর  

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৮
ধুলো উড়িয়ে ছোটাছুটি আফ্রিকান জেব্রাগুলোর   চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ধুলো উড়িয়ে ছোটাছুটি করছে আফ্রিকান জেব্রাগুলো। ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ  

চট্টগ্রাম: ধুলো উড়ছে। দলবেঁধে ছুটছে আফ্রিকান ডোরাকাটা জেব্রাগুলো। একবার উত্তর পাশে, আবার দক্ষিণ পাশে। চিড়িয়াখানার একজন কর্মী পানি ছিটাচ্ছেন। খাঁচার ভেতর পড়ে আছে শাকের আঁটি। বাইরে কৌতূহলী দর্শকের ভিড়। ভিড় হবে না কেন, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর প্রথম জেব্রা এলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়।

মঙ্গলবার (০৬ মার্চ) বেলা পৌনে ১২টায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৪৮ লাখ টাকায় আমদানি করা এক বছর বয়সী ছয়টি জেব্রা দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের নতুন ও বিদায়ী জেলা প্রশাসক।

এ সময় বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ছয়টি জেব্রা আনা হয়েছে।

এগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। বয়সও কম।
দর্শকদের কাছে টিকেট বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায় সেখান থেকে ৪৮ লাখ টাকায় জেব্রাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এ টাকা চিড়িয়াখানার খরচ নির্বাহের পর উদ্বৃত্ত যে তহবিল সেখান থেকে দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়  আফ্রিকান জেব্রাগুলো।  ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা, কিউরেটর, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসচিব রুহুল আমীনসহ সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ চিড়িয়াখানার পরিবেশ ক্রমাগত সুন্দর হচ্ছে। আমরা অনেক দূর যেতে চাই। চট্টগ্রামের জন্য একটিই চিড়িয়াখানা আছে।   

নিজের বিদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কথার চেয়ে কাজ বেশি পছন্দ করি। চট্টগ্রামের জন্য ভালো ভাববার, ভালো করবার চেষ্টা করেছি। নতুন জেলা প্রশাসক দায়িত্ব নিয়েছেন। তাকে আপনারা সহযোগিতা করবেন যাতে সরকারের মুখ উজ্জ্বল হয়, চট্টগ্রামের উন্নয়ন হয়।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ধুলো উড়িয়ে ছোটাছুটি করছে আফ্রিকান জেব্রাগুলো।  ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ

নতুন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, বিদায়ী জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামবাসীকে ছয়টি আফ্রিকান জেব্রা উপহার দিয়েছেন। আমিও চেষ্টা করব এ চিড়িয়াখানায় নতুন নতুন প্রাণী সংগ্রহসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার নির্বাহী কমিটির সদস্যসচিব ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, চিড়িয়াখানার জন্য দুইটি চ্যালেঞ্জ। একটি হচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যা ৯০ শতাংশ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। অপরটি ক্ষুদে দর্শকদের আকৃষ্ট করতে নতুন নতুন প্রাণী সংগ্রহ। ইতিমধ্যে আমরা বাঘ, সিংহ সংগ্রহ করেছিলাম। সর্বশেষ জেব্রা এলো। আগামীদিনে আমরা একটি এভিয়ারি বা পক্ষিশালা এবং পরিপূর্ণ শিশুপার্ক করতে চাই। আমাদের মূল লক্ষ্য খুদে দর্শকদের আকৃষ্ট করা। পশু-পাখির সঙ্গে পরিচিত করা।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়  আফ্রিকান জেব্রাগুলো।  ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ

তিনি জানান, ২০ জন স্টাফ চিড়িয়াখানার অর্ধশতাধিক প্রজাতির পশুপাখি দেখভাল করছেন। ঠিকমতো খাবার-পানি দিচ্ছেন কিনা, যত্নআত্তি হচ্ছে কিনা তা আমরা সিসিটিভির মাধ্যমে কার্যালয়ে বসে মনিটরিং করছি। ছয়টি জেব্রা সংগ্রহের প্রধান কারণ প্রদর্শনীর পাশাপাশি আমরা যদি প্রজননে সক্ষম হই তবে অন্য চিড়িয়াখানার সঙ্গে আদান-প্রদান করতে পারব।

জেব্রা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যালকন ট্রেডার্সের মালিক সোহেল আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, গাজীপুর সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন চিড়িয়াখানার চাহিদামতো বিদেশি পশু-পাখি সংগ্রহ করে দেন তারা। আমদানির ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ ট্যাক্স দেন সরকারকে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বাঘ, জেব্রা ছাড়াও জিরাফ, জলহস্তী, হোয়াইল লায়ন, ব্রাউন লায়ন, হিপোসহ বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখি আমদানি করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের আবহাওয়ার মিল থাকায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জেব্রাগুলো টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ধুলো উড়িয়ে ছোটাছুটি করছে আফ্রিকান জেব্রাগুলো।  ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ

মা-বাবার সঙ্গে জেব্রা দেখতে এসেছিলেন কাট্টলী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী আকলিমা সৈয়দা। সে বললো, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বছরে দুই-তিনবার বেড়াতে আসি আমরা। কালো-সাদা ডোরাকাটা বইয়ের পাতা আর ডিসকভারি চ্যানেলেই শুধু দেখেছি। এবারই প্রথম বাস্তবে দেখার সুযোগ হলো। এটা দারুণ অভিজ্ঞতা।  

৪৮ লাখ টাকার ৬ আফ্রিকান জেব্রা এলো চট্টগ্রামে

৪৮ লাখ টাকায় ৬টি জেব্রা আসছে মঙ্গলবার​   

বাঘের পর জেব্রা আমদানি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৮     

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।