‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সহ দেশের গান, স্লোগানে, অনুষ্ঠানমালায় বুধবার ভোর থেকে মুখরিত হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকা। ফুল হাতে, নগ্ন পায়ে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের আসা মিছিলের স্রোত শুধু মিলেছে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে।
এর আগে রাত ১২টা ১ মিনিটে নন্দনকানন ফায়ার স্টেশন থেকে বেজে উঠে সময়ের ঘণ্টা। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় শুরু হয় শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পালা। এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন কাউন্সিলর এবং সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেন।
এরপর বুধবার ভোর থেকে শুরু হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে প্রভাতফেরি। সময় বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মানুষের স্রোত। এক পর্যায়ে শহীদ মিনারের আশপাশের এলাকা সিনেমা প্যালেস, রাইফেল ক্লাব, নন্দনকানন, ডিসি হিল, রেয়াজউদ্দিন বাজার, নিউমার্কেট চত্বরসহ পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী ও সাধারণ মানুষ। পরে একে একে ফুল দিয়ে জাতির মহান সন্তানদের স্মরণ করেন। পুস্পস্তবক অর্পণের সময় শহীদ মিনারে আসা মানুষের শ্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। অনেকেই একুশের গান গেয়ে শহীদদের স্মরণ করেন।
সকাল ৯টায় নগর বিএনপির পক্ষ থেকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ানসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনসহ অন্য নেত্রীবৃন্দ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, একুশের পথ ধরেই আমরা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, লাল-সবুজের পতাকা আর আত্মপরিচয়ের অধিকার অর্জন করেছি। দলমত নির্বিশেষে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা জানান।
দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ( চট্টগ্রাম কেন্দ্র), উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কেন্দ্র(চট্টগ্রাম), সার্দান ইউনিভার্সিটি, চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভিার্সিটি কালচালার ক্লাব, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফাউন্ডেশন, সমাজ সমীক্ষা সংঘ, টিঅ্যান্ডটি কর্মচারী ফেডারেল ইউনিট, চাঁদের হাট(চট্টগ্রাম জেলা), বিভাগীয় পাসর্পোট ভিসা অফিস(চট্টগ্রাম),অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স ফোরাম(চট্টগ্রাম), পদার্পন ক্লাব, কর আইনজীবী সমন্ময় পরিষদ, চট্টগ্রাম সনাতনী কর পরিষদ, দৃষ্টি (চট্টগ্রাম),প্রভাত ফেরী,বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাচ ৭১, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী সহ শত শত সংগঠনের হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়া একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, কবিতা পাঠের আসর, গান সহ নানা অনুষ্ঠান পরিবেশ করা হচ্ছে।
১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি উত্তাল হয়ে উঠেছিল ঢাকার রাজপথ। পাকিস্তানি শাসকদের হুমকি-ধমকি আর রক্তচকক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভেঙে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পথে নেমেছিল সব বয়সের মানুষ।
‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই শ্লোগান যারা তুলেছিল তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলো। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার ওই আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
জেইউ/টিসি