ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঘাট শ্রমিক নিয়ে খুনোখুনি থামাতে কঠোর পুলিশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
ঘাট শ্রমিক নিয়ে খুনোখুনি থামাতে কঠোর পুলিশ সদরঘাট থানা

চট্টগ্রাম: নগরীর সদরঘাটে আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ঘাট শ্রমিকদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘাত নৈমিত্তিক বিষয়।  স্থানীয় পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় গত চার বছরে এই সংঘাত চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে।  বলি হয়েছে কমপক্ষে তিনজন। 

তবে পুলিশ এবার ঘাট শ্রমিকদের বিভিন্ন গ্রুপের লাগাম টানতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।   একটি হত্যা ঘাট শ্রমিক সরবরাহকারী জাহাঙ্গীর মাঝিসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

  তারা জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথাও জানিয়েছে।   এর মধ্য দিয়ে দুই বছর পর সদরঘাট থানার শাহজাহান হোটেলের সামনে ইদ্রিস হত্যার রহস্যও উন্মোচিত হয়েছে।

সংঘাতে জড়িত ঘাট শ্রমিকদের গ্রুপগুলোর নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় শ্রমিক লীগের নেতারা আছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে সদরঘাট থানার ওসি মো.নেজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল খুন হয়েছে ইদ্রিস।   এরপর ১১ ডিসেম্বর খুন হয়েছে ইব্রাহিম মানিক।   এর আগে ২০১৪ সালে খুন হয়েছে গণি।   সব হত্যাকাণ্ডই একই সূত্রে গাঁথা।   সবগুলোই ঘাট এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে ঘটেছে।

পুলিশ জানায়, কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটের শ্রমিক সরবরাহকারী জাহাঙ্গীর মাঝি এবং গণি।   ২০১৪ সালে ঘাটের আধিপত্য নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।   গণির অনুসারী রানা, ইদ্রিস, সানি, সোহান, মনা, কানা ফারুক ও জব্বার মিলে জাহাঙ্গীরের লোকদের উপর বিভিন্ন সময় হামলা করে।   টিকতে না পেরে জাহাঙ্গীর তার ভাই নাইক্যা আলমকেও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করে।   নাইক্যা আলম, হানিফ এবং সুমনও গণির লোকজনের হাতে মারধরের শিকার হলে জাহাঙ্গীরের গ্রুপ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠে।   সদরঘাট থানার শাহজাহান হোটেলের সামনে খুন হয় গণি।

গণির গ্রুপের দায়িত্বে আসে রানা ও ইদ্রিস।   গণি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জামিনে বেরোবার পর হানিফ, সুমন ও আলম আবারও এলাকায় ঢুকতে চাইলে বাধা দেয় রানা-ইদ্রিসরা।  

ওসি নেজাম বলেন, ২০১৫ সালের শেষদিক থেকে প্রায় প্রতিদিন তাদের মধ্যে মারামারি হতে থাকে।   জাহাঙ্গীরের ভাগিনা শাকিলকে কুপিয়ে আহত করা হয়।   জাহাঙ্গীরের বোন মামলা করলে সেই মামলা তুলে নেওয়া নিয়ে আরেক দফা দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়।   রানা ও জব্বার গ্রেফতার হয়।   এরপর জাহাঙ্গীর ও হানিফ মিলে ইদ্রিসকে খুনের পরিকল্পনা করে।

সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীর মাঝির গ্রুপের হানিফ, আলম, ফোরকান, আমির হোসেন মিন্টু রিভলবার ও কিরিচ নিয়ে ইসলামিয়া কলেজের গলি দিয়ে সাহেবপাড়ায় যায়।   অন্যদিকে কাস্টমসের রাস্তা দিয়ে জাহাঙ্গীর নিজে আরও কয়েকজনসহ লোহার পাইপ ও বোমা নিয়ে যায়।   ইদ্রিসকে সামনে পেয়ে পায়ে গুলি করে এবং শরীরে ককটেল ছুঁড়ে মেরে হত্যা করে।

গ্রেফতার হওয়া হাসান ও জাহাঙ্গীর মাঝি

এরপর ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর ইব্রাহিম মানিক নামের আরেকজনকে মেমন হাসপাতালের সামনে কুপিয়ে খুন করা হয়।   মানিক স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল।   তবে মানিক হত্যাকাণ্ডও আধিপত্য নিয়ে ঘাট শ্রমিক নিয়ন্ত্রণকারীদের বিরোধের জেরে সংঘটিত হয়েছে বলে তথ্য আছে পুলিশের কাছে।

এদিকে সদরঘাট থানা থেকে আনুমানিক ১০০ গজ দূরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও গত দুই বছরে এই মামলার কোন অগ্রগতি ছিল না।   সম্প্রতি সদরঘাট থানা পুলিশ নগরীর কর্ণেলহাট টিনবাজার এলাকা থেকে হোটেল নীল আবাসিক থেকে জাহাঙ্গীর মাঝি এবং পরবর্তীতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তার দেওয়া তথ্যে মো.হাসান (২০) নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করে।   দুজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, কর্ণেলহাটের নীল আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষ জাহাঙ্গীরের আস্তানা।   ওই কক্ষে আর কেউ থাকতে পারত না।   কক্ষের ভেতরে টাইলস ঘেরা গোপন সুড়ঙ্গপথও আছে।   আমরা যখন তাকে গ্রেফতার করতে যাই, তখন সে মদ্যপ ছিল।   সেজন্য তাকে গ্রেফতার করতে পেরেছি।   না হলে সে গোপন পথ দিয়ে পালিয়ে যেত।

‘জাহাঙ্গীর মাঝিসহ যাদের নাম আমরা পেয়েছি তারা খুবই দুর্ধর্ষ প্রকৃতির।   তাদের কাছে দা-কিরিচ, ককটেল থাকে।   সামান্য ঝগড়া হলেই কিরিচ নিয়ে ধাওয়া, একে অপরকে কুপিয়ে দেওয়া, খুন করা এদের প্রতিদিনের কাজ।   এদের কারণে এলাকার ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষও অতীষ্ঠ।   ইদ্রিস হত্যা মামলার সূত্র ধরে এসব সন্ত্রাসীদের আমরা আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। ’ বলে ওসি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একজন আরেকজনের বাসায় হামলা চালানো, রাস্তায় ‍একা পেলে কুপিয়ে আহত করার মতো ঘটনা ঘটেছে।   তবে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে একজন আরেকজনের বোনকে ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে।   কিন্তু এসব বিষয়ে কোন মামলা হয়নি।   শ্রমিক লীগের প্রভাবের কারণে পুলিশও নির্বিকার ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।