ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

টিআইবি’র গবেষণা

যাত্রী হয়রানিতে সিভিল এভিয়েশন-কাস্টমস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮
যাত্রী হয়রানিতে সিভিল এভিয়েশন-কাস্টমস চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

চট্টগ্রাম: সিভিল এভিয়েশন এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের ব্যাপকভাবে হয়রানির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।  বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার-এপিবিএন এবং ইমিগ্রেশন পুলিশও হয়রানিতে জড়িত বলে তথ্য দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

টিআইবি’র উদ্যোগে গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) গবেষণা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কমপক্ষে ৯ খাতে যাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় এবং নিয়মবর্হিভূত অর্থ দিতে হয়।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পাওয়ার পয়েন্টে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

  ‘শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম: যাত্রীসেবা কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবি’র ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাফর সাদেক চৌধুরী।  

এরপর সংবাদ সম্মেলনে সনাক-টিআইবি’র চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, বিমানবন্দরে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে আছে সিভিল এভিয়েশন, ইমিগ্রেশন, আনসার-এপিবিএন ও বিভিন্ন এয়ালাইনস কর্তৃপক্ষ এবং কাস্টমস।

  এদের মধ্যে সিভিল এভিয়েশন এবং কাস্টমস সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করে। যারা নিরাপত্তা প্রহরী আছে তারা নানাভাবে যাত্রীদের টাকাপয়সার জন্য হয়রানি করে।

লিখিত বক্তব্যে যে ৯ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও হয়রানির তথ্য সনাক-টিআইবি তুলে ধরেছে সেগুলো হচ্ছে বিমানবন্দরে প্রবেশের সময় আনসার সদস্যদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হওয়া।   প্রায়ই মালামাল লুকিয়ে রেখে আনসার সদস্যরা ৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বকশিস আদায় করে।  

একইভাবে যাত্রী বিমানবন্দর ত্যাগের সময়ও আনসার সদস্যরা বকশিস আদায় করেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।  এতে বলা হয়েছে, যাত্রীরা বের হওয়া সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীরা লাগেজ নিয়ে টানাটানি করেন।   অটোরিকশা ঠিক করে দেওয়া কিংবা মালামাল একটু এগিয়ে দেওয়ার নামে ১০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বকশিস আদায় করে।

কাঁচি ও আয়রন জাতীয় ধাতব বস্তু এবং শুটকী, ফলমূল, রান্না করা খাবার, কাঁঠালের মতো পচনশীল বন্তু পরিবহনের উপযুক্ত না হলেও ২০০ থেকে ৫০০ টাকার বিনিময়ে সেগুলো পরিবহনের সুযোগ দেন সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীরা।

বহির্গমন কার্ড পূরণের জন্য যাত্রী বিশেষত প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নেন সিভিল এভিয়েশন, ইমিগ্রেশন বিভাগ ও এয়ারলাইনসে কর্মরতরা।

ইমিগ্রেশন বিভাগের টাকা আদায়ের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে গবেষণা প্রতিবেদনে।   এতে বলা হয়েছে, ভিজিট ভিসার মাধ্যমে যারা মধ্যপ্রাচ্যে যান তাদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়।   ভিসার মেয়াদ কম, ছবি ঠিক নেই এসব অজুহাতেও প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। ছবি: বাংলানিউজ

১০০ টাকা কিংবা ২৫ মার্কিন ডলারের বেশি মুদ্রা আটকের এখতিয়ার কাস্টমস কর্তৃপক্ষের থাকলেও চূড়ান্ত চেকের সময় নিরাপত্তা কর্মীরা সেগুলো জোরপূর্বক কেড়ে নেন বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বোর্ডি লাউঞ্জে খাবারের দাম অস্বাভাবিক বেশি।   সনাক-টিআইবি প্রতিবেদনে বলছে, অনেক যাত্রীই মনে করেন বোর্ডিং লাউঞ্জে খাবারের দাম বাইরের দোকানের চেয়ে বেশি থাকা স্বাভাবিক।   এজন্য যে কফি বাইরে ১০ টাকায় বিক্রি হয়, বিমানবন্দরের ভেতরে সেটা ৩০ টাকা।

শুল্ক বিভাগের কর্মীদের একাংশের সহায়তায় নিয়ম বর্হিভূতভাবে মদ-তামাক জাতীয় আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য ছাড় করা হয়।  আবার যাত্রীরা শর্ত সাপেক্ষে আমদানির যোগ্য টেলিভিশন, সোনার বার, মোবাইল, শাড়িও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসেন।   এক্ষেত্রে ২ হাজার টাকা থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ের কথা এসেছে প্রতিবেদনে।

পার্কিং এলাকায় মধ্যস্বত্তভোগী একটি চক্রের দৌরাত্ম্য আছে।   তাদের জন্য বিমানবন্দরের যাত্রীদের বাড়তি টাকা দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করতে হয় বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সনাক’র সহ-সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া, টিআইবি’র সাধারণ পরিষদ সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটি এবং চট্টগ্রাম মহানগরের এরিয়া ম্যানেজার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।