প্রিমিয়ারের ডিজাইন স্টুডিও গাইড স্থপতি কুহেলী চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ‘জলাকর্ষী’ শীর্ষক এ গবেষণাকাজে অংশ নেন রাহুল দে, ইমরান হোসেন, সামিরা মনসুর, তাহরিমা বখতিয়ার, সুমাইয়া নাজনীন, নাজমুল আলম ও কৌশিক দাশগুপ্ত।
তারা মনে করেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণেই মহেশখাল নগরীর জন্য আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: চাক্তাই খালের ‘পাকা তলা’ ভাঙার সুপারিশ তরুণ স্থপতিদের
রাহুল দে জানান, ১০ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মহেশখাল নিয়ে অক্টোবরে কাজ শুরু করি। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম থেকে ২৯ দিন ফিল্ড সার্ভে করেছি। খালপাড়ে অবৈধ স্থাপনা তো আছেই। গৃহস্থালি ও শিল্পকারখানার ময়লা-আবর্জনা জমে ভরাট হচ্ছে। অবৈধ দখল হচ্ছে। জোয়ারের প্রবাহ ঠিকমতো হচ্ছে না, খালের অর্ধেকে আটকে যাচ্ছে। খালের শাখা-প্রশাখাগুলোর প্রশস্ততা কমছে। বৃষ্টিতে পাহাড়ের বালু-পলি এসে জমছে। খালের বঙ্গোপসাগরের অংশে ভূমিটা উঁচু। কর্ণফুলীর দিকে ভূমিটা উঁচু-নিচু। ফলে পানি যেতে পারছে না। তখন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
তাহরিমা বখতিয়ার বলেন, মানবদেহে রক্ত সঞ্চালনের জন্য যেমন শিরা-উপশিরাগুলো, তেমনি চট্টগ্রাম মহানগরের শিরা-উপশিরাগুলো হচ্ছে খাল-নালা। আগে এগুলো নগরীর প্রাণ। এ নগরীকে বাঁচাতে হলে খাল-নালার সংযোগ দরকার। পানি প্রবাহ ঠিক রাখা দরকার। পাশাপাশি আমাদের জলাধার দরকার। নতুন কিছু জলাধার ও খাল খনন দরকার।
রাহুল দেব জানান, একসময় যেটি জলাধার ছিল এখন সেটি হাউজিং প্রকল্প হয়ে গেছে। এটি জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ। অনেক নালার ওপর দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। সিডিএ আবাসিক, বেপারীপাড়া, ছোটপুল, পুলিশ লাইন, হালিশহর কে ব্লক, এল ব্লক, শান্তিবাগ আবাসিকসহ বড় একটি এলাকা জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত হচ্ছে মহেশখালের কারণে। আগে এসব এলাকায় পানি উঠত না। তাই সেখানে গড়ে তোলা হয়েছিল এসব আবাসিক এলাকা। এখন সেখানে হাসপাতালে পানি উঠছে, স্কুলে পানি উঠছে, বাসা-বাড়িতে গলাপানি উঠছে। অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান গতবছর বর্ষায় চলাচলের জন্য নৌকা কিনেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। অনেক ভবনের নিচতলা বছরের ছয় মাসের বেশি সময় খালি থাকে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর।
তারা বলেন, সড়কগুলো খালের পাড়ে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে মানুষের নজরে চলে আসবে খালটি। সেখানে ২০ ফুট জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। তখন এটি মানুষের সামনে চলে আসবে। তখন দখল-দূষণ থাকবে না। ওই ২০ ফুটের মধ্যে দুই ফুটের সবুজ, ৮ ফুটের হাঁটার পথ, ২ ফুটের সবুজ, ৮ ফুটের সাইকেল চালানোর পথ। এটি হলে খালটি সবার সামনে চলে আসবে।
পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কিছু জলাধার প্রস্তাব করেছেন জানিয়ে তাহরিমা বলেন, বর্তমানে ছোট-বড় এক হাজার পুকুর-ডোবা-জলাশয় রয়েছে। এগুলো সংরক্ষণের প্রস্তাব করেছি। এখন এলাকার ৭৬ শতাংশ বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। ধীরগতিতে নদীপথে অপসারণ হচ্ছে। আমাদের প্রস্তাবনায় খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা বাড়িয়ে, পুকুর-জলাশয়গুলোর পাড় বেঁধে দিলে ৬২ শতাংশ বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যাবে।
কুহেলী চৌধুরী বলেন, বনশ্রী থেকে ১০ মিনিটে নৌপথে কারওয়ান বাজারে পৌঁছি আমি। এটি চট্টগ্রামেও সম্ভব। কারণ এটি জলশহর। এখানে মহেশখাল আছে। চাক্তাই খাল আছে। একসময় এ দুটি খালকে ঘিরে অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। মানুষ পারাপার হতো। এখনো সঠিক উদ্যোগ নিলে ওয়াটার ট্যাক্সি চালু করা যাবে। এর জন্য আমাদের কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি জানান, আমাদের শিক্ষার্থীরা মহেশখাল সরেজমিন পরিদর্শন করে তাদের প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। খালটির খুবই করুণ অবস্থা। এটি বাঁচাতে হবে। তাহলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে নগরীর বড় একটি এলাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৮
এআর/টিসি